পরিবেশ ডেস্ক:
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুসারে, বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার বায়ুমান সূচক (AQI) দাঁড়ায় ১৫৫, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত। এই অবস্থায় ঢাকার বাতাস সাধারণ মানুষের জন্যও ক্ষতিকর এবং বিশেষত শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
আইকিউএয়ার বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুমান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় বর্তমানে ঢাকার অবস্থান নবম। সংস্থাটির মানদণ্ড অনুযায়ী, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত বায়ুমান সূচক ‘অস্বাস্থ্যকর’ স্তরের মধ্যে পড়ে। এই পর্যায়ে দীর্ঘক্ষণ দূষিত বাতাসে অবস্থান করলে তা শরীরে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ অবস্থায় সংবেদনশীল গোষ্ঠী যেমন শিশু, প্রবীণ নাগরিক এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া উচিত। সাধারণ মানুষকেও বাইরে বের হলে মানসম্মত মাস্ক ব্যবহার করতে এবং খোলা স্থানে শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘরের জানালা বন্ধ রাখা ও এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM2.5) দূষণের মূল উৎস হিসেবে কাজ করছে। এই কণাগুলো শ্বাসতন্ত্রের গভীরে প্রবেশ করে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই দূষণের প্রভাবে হাঁপানি, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগ এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান কারণ নির্মাণস্থলের ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্পকারখানার নির্গমন এবং শহরতলির ইটভাটা। তারা বলেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত সড়ক পরিস্কার, নির্মাণকাজে ধুলা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা, এবং পুরোনো যানবাহন বন্ধে কার্যকর নীতি গ্রহণ জরুরি।
আজকের তালিকায় ঢাকার চেয়ে বেশি দূষিত শহরগুলো হলো—পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের দিল্লি, চীনের বেইজিং, পাকিস্তানের করাচি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, চীনের উহান, নেপালের কাঠমান্ডু ও ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। এসব শহরের বায়ুমান সূচক ১৬০ থেকে ২০০-এর মধ্যে অবস্থান করছে, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রারও ওপরে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা মহানগরের বায়ুর মান উন্নয়নে অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য সংকট আরও তীব্র হতে পারে। তারা সরকার ও নাগরিক উভয়কেই সচেতন হয়ে দূষণ রোধে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।