রাজনীতি ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চারপাশে ‘সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে’, তাই অভ্যন্তরীণ বিভেদে প্রতিপক্ষ যেন সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য গ্রহণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান জানান, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রত্যেকের এটি দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, যা একটি জনপ্রিয় দলের জন্য স্বাভাবিক ও গৌরবের বিষয়। তবে সবাইকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। স্বাধীনতার ঘোষকের সেই বাণী মনে রাখতে হবে—‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’”
তারেক রহমান জানান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতাকেও নির্দিষ্ট আসনে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বিএনপির কিছু আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না পেলেও সবাইকে “দেশ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে” এই বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বিএনপি সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনশ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, আর এখনো বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল শুরু হয়েছে।” তবে তিনি বিশ্বাস করেন, “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই সংশয় গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।”
তারেক রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কৌশল ও অপকৌশলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারলে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি তৈরি হয়।” তিনি গণতন্ত্রকামী সব দলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার উদ্যোগের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “এটি প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ভোট প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল মনে হলেও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসীদের ভোট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হবে।”
নারী ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গত আগস্ট মাসে ৯৩ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ১৪টি ধর্ষণ ঘটেছে, এর মধ্যে সাতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এই সময়ে ৮৯ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হতে পারে না। রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।