রাজনীতি ডেস্ক
নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে একত্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের পক্ষে মত দিয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশন। এই অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সোমবার (৩ নভেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বরাবর লেখা এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে এনসিপি উল্লেখ করে, সাম্প্রতিক সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় বিএনপিকে দেওয়া আইন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপি দাবি করে, রাষ্ট্রের উপদেষ্টা হিসেবে তার ভূমিকা নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে আশ্বাস দেওয়া জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থি।
আখতার হোসেন বলেন, “আইন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও জনস্বার্থনির্ভর প্রক্রিয়া। সরকার পক্ষ থেকে কোনো একক দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া জনআস্থা ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থি। এনসিপি মনে করে, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, আর্থিক স্বচ্ছতা ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
আখতার হোসেন উল্লেখ করেন, “যখন কোনো নিবন্ধিত দল অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন তারা নিজেদের নিবন্ধনের দায় থেকে কার্যত অব্যাহতি পায়। এতে নিবন্ধনের উদ্দেশ্যই নষ্ট হয় এবং নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।”
এনসিপির মতে, ভোটাররা যখন একাধিক নিবন্ধিত দলকে একই প্রতীকে ভোট দেন, তখন প্রকৃত প্রার্থী বা দলের দায়বদ্ধতা অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। ভোটার বুঝতে পারেন না, তিনি কাকে বা কোন মতবাদকে ভোট দিচ্ছেন। এতে ভোটার-দায়বদ্ধতার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা কমে যায়।
চিঠিতে বলা হয়, এই পরিস্থিতি কৃত্রিম বহুদলীয়তার জন্ম দেয়। বড় দলগুলো নিজেদের সুবিধার্থে ছোট ‘প্রক্সি দল’ তৈরি করে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করায়। ফলে সংসদে ও রাজনৈতিক পরিসরে মতের বৈচিত্র্য হারিয়ে যায় এবং গণতান্ত্রিক ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া বিকৃত হয়।
এনসিপি নির্বাচন কমিশন ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত জানিয়ে বলেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত—কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। যদি একাধিক দল যৌথভাবে প্রার্থী দিতে চায়, তাহলে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত সংশোধন রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত করবে না; বরং প্রকৃত গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করবে। কারণ এতে প্রতিটি দলকে নিজেদের নীতি, নেতৃত্ব ও কর্মকাণ্ডের দায় নিজেকেই বহন করতে হবে।
এনসিপি মনে করে, এই প্রক্রিয়া ভোটারের অধিকার সুরক্ষিত করবে, রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা বাড়াবে এবং সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে। তাই সরকারকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত অবস্থান বিষয়ে দ্রুত ও পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানায় দলটি।