রাজনীতি ডেস্ক
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) চূড়ান্ত করার আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। তিনি অভিযোগ করেন, ইসি এখনো স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারেনি দেশে কারা প্রকৃত রাজনৈতিক দল এবং তাদের অবস্থান বা মতামত কী। দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ না করেই আরপিও চূড়ান্ত করায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাইফুল হক এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসা হতো, তাহলে আরপিও নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারত এবং প্রয়োজনে সংশোধনের সুযোগ থাকত।” তিনি মনে করেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সম্পর্কিত বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ও অনাস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সাইফুল হক বলেন, “এটা বাস্তবসম্মত হয়নি।” একইসঙ্গে নির্বাচনী ব্যয়সীমা ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণকেও তিনি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি নির্বাচনে কালো টাকা, অবৈধ অর্থ ও মাফিয়াদের প্রভাব বন্ধ করা না যায়, তাহলে আগামী সংসদ কালো টাকার মালিকদের ক্লাবে পরিণত হবে।” সাইফুল হক মনে করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অর্থের প্রভাব বন্ধ না করতে পারলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবলমাত্র অল্পসংখ্যক ধনী প্রার্থীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে কমিশনের দক্ষ জনবল ব্যবহার করা যেতে পারে। জনপ্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও এই দায়িত্বে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পোলিং অফিসার নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো বিতর্ক বা প্রশ্ন নেই, যেগুলোর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সুনাম রয়েছে—সেসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্য থেকে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোকে কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। এতে কমিশনের কাজের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী প্রতীক সংক্রান্ত বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, “যেসব দলের নিবন্ধন আছে, তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করা উচিত। এটি রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্ব।” তবে তিনি মনে করেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের সময়সীমা বিবেচনায় রেখে জোটবদ্ধ দলগুলোর জন্য অন্য প্রতীকে ভোট করার সুযোগ রাখা যেতে পারে।
তার মতে, “এখনই নতুন বিধান জারি করা হলে সেটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। তবে ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য নিজস্ব প্রতীকে ভোটের বিধান স্থায়ীভাবে কার্যকর করা যেতে পারে।”
সাক্ষাৎ শেষে সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কার্যকর সংলাপ শুরু করতে হবে, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সকলের আস্থা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।