রাজনীতি ডেস্ক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সংবিধানে গণভোটের কোনো বিধান নেই। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর গণভোটের দাবি তোলার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে গণভোটের বিধান যুক্ত করা হয়, তবেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘জনতার ইশতেহার’ শীর্ষক এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আমীর খসরু বলেন, “বর্তমান সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে এবং তারা এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছেন। এই সংবিধানে গণভোটের কোনো ধারা নেই। সুতরাং এই মুহূর্তে গণভোট আয়োজনের প্রশ্নই আসে না।” তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, “গণভোটসহ যেকোনো দাবি নিয়ে কথায় কথায় রাস্তায় নামার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “আপনারা যদি দাবি নিয়ে মাঠে নামেন, আর এর বিপরীতে দেশের বড় কোনো রাজনৈতিক দল পাল্টা কর্মসূচি দেয়, তাহলে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সংযম ও রাজনৈতিক পরিপক্বতা প্রয়োজন।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। কনসেনসাসের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের দলের ৩১ দফার অনেক বিষয় এখনো ঐকমত্যে আসেনি, কিন্তু তাই বলে আমরা রাস্তায় নামিনি। আমরা জনগণের কাছে গিয়েছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “ঐক্যমতের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আপনার চিন্তাভাবনা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আপনি যদি ক্ষমতায় আসেন, তখন সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু এখন জনগণের মতামতের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অগণতান্ত্রিক হবে।”

সংলাপে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আমীর খসরু চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। তবে কেউ কেউ নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে—এ বিষয়েও আমাদের সন্দেহ রয়েছে।”

অর্থনৈতিক প্রসঙ্গে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে শেয়ারবাজারে কোনো ধস নামেনি। দেশের অর্থনীতি তখন স্থিতিশীল ও গতিশীল ছিল। আমরা বেসরকারি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলাম, ভবিষ্যতেও দেব। এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যাতে নাগরিকরা ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক অনুমোদন ও লাইসেন্স পেতে পারেন।”

তিনি বলেন, “যত বেশি জনগণকে ক্ষমতায়ন করা যাবে, তত বেশি দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায়ন নয়, জনগণের ক্ষমতায়নই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।” প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সবার নাগালে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন তিনি।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার আহ্বান জানান।