জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে হত্যা, নির্যাতন ও জুলুম করেছে এবং জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না। তিনি শেখ হাসিনাকে “সন্ত্রাসী” বলে আখ্যায়িত করেন এবং তাকে দেশে আসতে না দেয়ার দাবি জানান। ঠাকুরগাঁওয়ে সাংগঠনিক সফরের তৃতীয় দিনে বড়গাঁও ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
আজ (মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের বড়গাঁও ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যে অভিযোগ রয়েছে, সে কারণে জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না।” শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “সাহস থাকলে দেশে এসে জেল খেটে তারপর কথা বলুন।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “এবার নির্বাচন যদি পেছানো হয়, তবে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।” তিনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক দলকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এখন সময় এসেছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সঠিক দলকে ভোট দিয়ে এলাকার সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটানোর।”
এ সময় তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “একটি দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের কাছে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। যারা মুনাফেকি করে, তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।” মির্জা ফখরুলের দাবি, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার জনগণের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, “সংস্কারের বিষয়ে যে বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তার বাইরে কিছু জোর করে চাপিয়ে দিলে এর সমস্ত দায় সরকারকেই নিতে হবে।” একই সঙ্গে বিএনপি সরকার গঠনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৫ মাসের মধ্যে এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।”
শিক্ষা খাতের সংস্কারের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শরীরচর্চা শিক্ষক এবং সংগীত শিক্ষক বাদ দেয়া ঠিক হয়নি। এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় এক ধরনের অসম্পূর্ণতা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষার মানে প্রভাব ফেলবে।”
এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে চায়, যাতে জনগণ সহজে ন্যায়ের প্রতি পৌঁছাতে পারে এবং সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্তি পায়।”
মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যগুলো বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। তার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ এবং নির্বাচনের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি যে “শেখ হাসিনাকে সন্ত্রাসী” বলে আখ্যায়িত করেছেন, তা আওয়ামী লীগের প্রতি বিএনপির তীব্র বিরোধিতা এবং শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা সংকটের প্রতিফলন। পাশাপাশি, তার দাবি অনুযায়ী, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়নে বড় পরিবর্তন আসবে, যা নির্বাচনী প্রচারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে দলীয়ভাবে শক্তিশালী অবস্থান নিতে চায় এবং তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, দেশের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে, তার ভাষার কঠোরতা এবং উক্তিগুলোর রাজনৈতিক প্রভাবও ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
আজকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ আরও অনেকে। সভায় মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শোনার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনা শেষে তিনি এক ফুটবল খেলার ফাইনালের উদ্বোধন করবেন বলে জানান।