নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সোমবার প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সংগঠনের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান ট্রাইব্যুনালের রায় সম্পর্কে তাদের অবস্থান তুলে ধরে বিভিন্ন দাবি ও পরবর্তী প্রত্যাশার কথা জানান।
বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ রায় ঘোষণা হওয়াকে তারা বিচারব্যবস্থার অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, বিচারের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তারা দাবি করেন, এ ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়া দেশের অতীত সহিংসতার ঘটনাগুলো সম্পর্কে সত্য উদঘাটনের সুযোগ তৈরি করে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ সুগম করে।
হেফাজত ইসলাম তাদের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করে যে, এ রায় ভবিষ্যতে সংঘটিত অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। তারা মনে করে, রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও দৃঢ় হয়। সংগঠনের নেতারা বলেন, যেকোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ তদন্ত, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে বিচার নিশ্চিত করাই দীর্ঘমেয়াদে ন্যায়বিচারের ভিত্তি স্থাপন করে।
বিবৃতিতে নেতারা অতীতের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিচারের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন। তাদের দাবি, অতীতের সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। তারা মনে করেন, এসব ঘটনার বিচার নিশ্চিত হলে নাগরিক সমাজে আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বিচারবহির্ভূত প্রভাব বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কমে আসবে।
হেফাজত নেতারা আরও বলেন, দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিভিন্ন কাঠামোগত সমস্যার সমাধানের জন্য সার্বিক পর্যালোচনা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শক্তিশালী বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত। তারা মনে করেন, এ ধরনের ব্যবস্থা গৃহীত হলে নাগরিক অধিকার, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় থাকবে।
এছাড়া বিবৃতিতে গণভোটের মাধ্যমে নীতি-সংস্কার ও সাংবিধানিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের দাবিও জানানো হয়। সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, জনগণের মতামত প্রতিফলিত করে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করলে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। তারা আশা প্রকাশ করেন, শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে নাগরিক নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের পরিবেশ আরও সুদৃঢ় হবে।
বিবৃতির শেষ অংশে সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটর দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সংগঠনের দাবি, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব এ ধরনের মামলার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়েছে। তারা মনে করেন, প্রতিষ্ঠানগত সক্ষমতা, সুশৃঙ্খল তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়ার যথাযথ ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
হেফাজতের বিবৃতিতে উপস্থাপিত এসব বক্তব্য ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাইব্যুনালের এ রায় এবং এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রায়ের প্রভাব জাতীয় রাজনীতি, মানবাধিকার আলোচনা এবং আইনগত সংস্কারের ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রতিফলিত হতে পারে।