নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। নিজের ৬১তম জন্মদিনে তিনি ফেসবুকে প্রকাশিত পোস্টে বলেন, বর্তমান পৃথিবী এবং আগামী প্রজন্মের সামনে থাকা পৃথিবীর মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। তিনি বলেন, সুযোগ অনেক বড় হলেও ঝুঁকিও ততটাই বিস্তৃত।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের নারীরা এখনও নিরাপদ বোধ করতে পারেন না। প্রতিদিন অসংখ্য নারী কথা বলার, পড়াশোনা করার, কাজ করার বা স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য হয়রানি, হুমকি, বুলিং ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি সেই বাংলাদেশ নয় যা দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি—অনলাইনে ও অফলাইনে, ঘরে ও বাইরে, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।
নারীর নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বিএনপি পাঁচটি অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে। প্রথমত, একটি জাতীয় অনলাইন সেফটি সিস্টেম গঠন করা হবে, যেখানে নারীরা সহজে সাইবার বুলিং, হুমকি, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার বা তথ্য ফাঁসের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এতে ২৪/৭ হটলাইন, অনলাইন পোর্টাল এবং প্রশিক্ষিত সাড়া-দাতার দল থাকবে, যারা দ্রুত ও কার্যকর সহায়তা দেবে। বড় প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট মডারেশন উন্নত করা হবে এবং অপমানজনক কনটেন্ট দ্রুত অপসারণ করা হবে।
দ্বিতীয়ত, সার্বজনীন জীবনে থাকা নারীদের জন্য সুরক্ষা প্রোটোকল প্রবর্তন করা হবে। এতে সাংবাদিক, কর্মী, শিক্ষার্থী বা কমিউনিটি নেত্রী হিসেবে যারা আক্রমণের মুখে পড়েন, তাদের জন্য স্পষ্ট জাতীয় নির্দেশিকা থাকবে। দ্রুত আইনি ও ডিজিটাল সহায়তা, গোপনীয়ভাবে অভিযোগ জানানোর পথ এবং এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে যেখানে কোনো নারী জনজীবনে অংশ নেওয়ার কারণে চুপ করানো হবে না।
তৃতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা শিক্ষা সম্প্রসারণ করা হবে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহারিক ডিজিটাল নিরাপত্তা শিক্ষা প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা ‘সেফটি ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে কাজ করবেন, এবং বার্ষিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি তরুণদের ডিজিটাল বিশ্বে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলতে সাহায্য করবে।
চতুর্থত, নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে শক্তিশালী কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিক্রিয়া গঠন করা হবে। কমিউনিটি হেল্প ডেস্ক, নিরাপদ পরিবহন রুট, উন্নত স্ট্রিট লাইটিং এবং ট্রমা-সেন্সিটিভ রেসপন্ডারদের মাধ্যমে নারীদের প্রতিদিনের জীবন আরও নিরাপদ ও পূর্বানুমেয় করা হবে।
পঞ্চমত, নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এতে নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ, পরামর্শদাতা নেটওয়ার্ক এবং স্কুল-অফিস-কারখানায় শিশু পরিচর্যার বিস্তৃত ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারীরা নেতৃত্ব গ্রহণ, অর্জন এবং পূর্ণাঙ্গভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন।
তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি, ধর্ম, জাতিগত পরিচয় বা লিঙ্গ নির্বিশেষে বাংলাদেশিদের উচিত একটি সত্যে এক হওয়া: নারীরা যখন নিরাপদ, সমর্থিত এবং ক্ষমতায়িত হন, তখন বাংলাদেশ অদম্য হয়ে ওঠে। তিনি নাগরিকদের মেয়েদের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে।