জাতীয় ডেস্ক
দেশব্যাপী চলমান আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেও ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষা পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ২৭ নভেম্বর থেকেই শুরু হবে। রোববার রাতে প্রকাশিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিছু চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তারা পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সমাবেশ ও অন্য কর্মসূচি পালন করেছেন। সর্বশেষ রাজশাহী ও ময়মনসিংহে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করলে প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা না পেছালে তারা অনশনসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারেন।
পিএসসি জানায়, সময়সূচি পরিবর্তনের দাবিতে প্রার্থীদের একটি অংশ বিভিন্ন ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন। কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন এবং কেউ কেউ সংগঠিতভাবে অনশনেও অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধি কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে কমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। কমিশন তাদের এসব কার্যক্রম ও দাবির বিষয়টি অবহিত থাকলেও সময়সূচি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। প্রার্থীরা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ পান। পরবর্তী সময়ে ১৯ সেপ্টেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যার ফলাফলের ভিত্তিতে ১০ হাজার ৬৪৪ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হয়। পিএসসি গত ৩ জুন নোটিশের মাধ্যমে ২৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে। তাই লিখিত পরীক্ষার জন্য মাত্র দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে—এ দাবি তথ্যভিত্তিক নয় বলে কমিশন জানায়।
কমিশনের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি অপরিহার্য। আবেদন করার পর পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া একজন চাকরি–প্রার্থীর দায়িত্বের অংশ। বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করা হয়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে গড়িমসি বা অনীহা সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলাবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
পিএসসি জানায়, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ক্যাডার ও নন–ক্যাডার পরীক্ষার জট দূর করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত মে–জুনে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়, যার আওতায় ইতোমধ্যে দুটি বিশেষ বিসিএসসহ একাধিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষার আয়োজন অব্যাহত রাখতে না পারলে রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটবে বলে কমিশন মনে করে। এই কারণেই ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে পিএসসি অনুরোধ জানায় যে, তারা যেন ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বর থেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানায় কমিশন।
এদিকে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচিও প্রকাশ করেছে পিএসসি। প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরু হবে ২৭ নভেম্বর এবং চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দেশের আটটি বিভাগীয় শহর—ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ—এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে পদ–সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা শুধুমাত্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। পিএসসি জানিয়েছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে বিতরণ, মূল্যায়ন ও ফল প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৪৭তম বিসিএসে অংশ নিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য এই লিখিত পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কমিশন আশা করছে, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা সম্পন্ন হলে পরবর্তী ধাপগুলো দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন জানায়, পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করলে শুধুমাত্র ৪৭তম বিসিএসের সময়সূচিই নয়, চলমান ও আসন্ন অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার সময়সীমাও প্রভাবিত হবে। ফলে সামগ্রিক নিয়োগপ্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই কারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বজায় রাখতে সময়সূচি অপরিবর্তিত রাখাই প্রয়োজন বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।