নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, সোমবার, ২৪ নভেম্বর: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিভক্তির কারণে সাংবাদিকরা কখনো কখনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবের মধ্যে পড়েন এবং নিজেদের স্বতন্ত্র সাংবাদিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন। তিনি এই মন্তব্য করেছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত ‘মিডিয়া সংস্কার প্রতিবেদনের পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে, যা রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে একাধিক ভগ্নাংশ দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বিএফইউজে, ডিআরইউ এবং দুই দলের বিভিন্ন বিভাজন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনারা নিজেরাই আজ দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সাংবাদিকদের প্রভাবিত করতে চায়। যদি সাংবাদিকরা রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যে পড়েন, তা তখন সমস্যা সৃষ্টি করে।”
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ৩১ দফার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, একটি স্বাধীন গণমাধ্যম গড়ে তোলা হবে। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে একটি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করেন যে, যদি জনগণের ভোটে সরকার গঠনের দায়িত্ব পান, তাহলে এই বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতা রক্ষা ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য। বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, রাজনৈতিক চাপ এবং সাংগঠনিক বিভাজন সাংবাদিকদের কাজের ওপর প্রভাব ফেলে।
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) এই সেমিনারের আয়োজন করেছে মিডিয়া সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য। সেমিনারে সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, সংগঠনের স্বচ্ছতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠা করার বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি সাংবাদিকরা নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকেন, তবে গণমাধ্যমের মান ও জনগণের কাছে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দল ও সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় ও স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উঠে আসে। তিনি এও বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যম গড়ে তোলার জন্য স্থায়ী কাঠামো ও আইনগত পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এতে করে সাংবাদিকরা ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে তথ্য প্রেরণ করতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই ধরনের আলোচনার গুরুত্ব ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক চাপ, সংগঠনগত বিভাজন এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা এই ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা দেয়। সেমিনারে এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও আলোচনা করা হয়, যা ভবিষ্যতে মিডিয়া নীতি ও কাঠামো প্রণয়নে প্রভাব ফেলতে পারে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য দেশের সাংবাদিক সমাজে আলোচনার বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব রক্ষা, রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সংগঠনিক সংস্কারের গুরুত্ব বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।