জাতীয় ডেস্ক
সরকার দেশের ভূমি ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও আইনগতভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুনভাবে ‘ভূমি ব্যবহার স্বত্ব আইন’ এবং ‘ভূমি অপরাধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই আইনের আওতায় এমন সব দলিল বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বৈধভাবে রেজিস্ট্রি করা হয় না, বৈধ সিল ও সাক্ষরহীন থাকে এবং সরকারের কোনো ফি আদায় হয় না। নতুন আইন কার্যকর হলে এই ধরনের দলিল আর গ্রহণযোগ্য হবে না।
নতুন আইনের প্রধান লক্ষ্য হলো জমি ক্রয়-বিক্রয়, হেবা বা দান, বন্ধক, উত্তরাধিকার সূত্রে বাটোয়ারা এবং বায়না দলিলসহ সব ধরনের জমি সংক্রান্ত লেনদেনকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা। জমি সংক্রান্ত কোনো দলিল বৈধ হতে হলে তা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার জন্য জমির পূর্ণ বিবরণ, মালিকানা ইতিহাস, সীমানা, নকশা, দাতা-গ্রহীতার নাম-ঠিকানা এবং প্রয়োজনীয় হলফনামা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া রেজিস্ট্রি ফি, কর, ভ্যাট এবং আইন অনুযায়ী আয়কর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক।
নতুন আইন অনুসারে শুধুমাত্র রেজিস্ট্রিবিহীন দলিল নয়, জাল খতিয়ান বা জাল দলিল তৈরি করেও অন্যের সম্পত্তি দখল করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, খাস জমি বেআইনি দখল করে জাল দলিল করা হলে তা বাতিল হবে। এ ছাড়াও, অন্যের ওয়ারিশদের অধিকার বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রি করলে সেই দলিলও আইনগতভাবে বৈধ হবে না।
আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন আইনে দলিল জালিয়াতি, অবৈধ দখল ও প্রতারণার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। শাস্তির মধ্যে রয়েছে তিন মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।
বৈধ দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং আইনগত প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এই নতুন আইন ভূমির স্বচ্ছতা ও জনগণের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রতারণা ও জালিয়াতির সুযোগ কমিয়ে আনা এবং জমি লেনদেনকে আইনের আওতায় আনা দেশের ভূমি ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নতুন আইন কার্যকর হলে দেশের জমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে, বৈধ মালিকানা নিশ্চিত হবে এবং ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে আইনগত সহায়তা শক্তিশালী হবে। এছাড়া, জাল দলিল ও অবৈধ দখল প্রতিরোধে আইনগত প্রক্রিয়া আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।