নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর আফটার শক বা পরাঘাত নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের প্রধান ঝাঁকুনির পর কতদিন পর্যন্ত আফটার শক ঘটতে পারে এবং এ সময় কী ধরনের সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত তা নিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি জেমিনি সম্প্রতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে।
জেমিনির তথ্যমতে, আফটার শকের সময়কাল মূল ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং ভূ-ত্বকের কঠিনতার উপর নির্ভর করে। প্রধান ভূমিকম্প আঘাত হানার ফলে ভূ-ত্বকের চ্যুতি রেখায় যে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়, সেই চাপ ধীরে ধীরে মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। তবে দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের জন্য সামান্য পরাঘাতও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এআই জানায়, আফটার শক মূল ভূমিকম্পের পর একই অঞ্চল বা আশপাশে সৃষ্ট ছোট কিন্তু অনুভূতিযোগ্য কম্পন। সাধারণত এসব পরাঘাত কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বিশেষভাবে, প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরাঘাতের সংখ্যা ও তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রধান ভূমিকম্প যদি ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার হয়, তবে আফটার শক কয়েক মাস বা কখনও কখনও কয়েক বছর পর্যন্তও চলতে পারে। জেমিনির তথ্য অনুযায়ী, যখন এলাকার কম্পন পুনরায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে, তখনই আফটার শক শেষ হওয়া ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভূমিকম্পের পর দুর্বল ও দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি। ভবন, সেতু বা অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পর্যালোচনা করে ঝুঁকি নির্ণয় এবং জরুরি কিটের মাধ্যমে প্রাথমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
উল্লেখযোগ্য, শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীকে কেন্দ্র করে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং প্রাণহানি ঘটে ১০ জনের। নিহতদের মধ্যে নরসিংদীর পাঁচজন, ঢাকার চারজন এবং গাজীপুরের একজন রয়েছেন। বিভিন্ন জেলা প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জরুরি সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
ভূমিকম্প ও আফটার শকের প্রভাব বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরানো, জরুরি চিকিৎসা সরবরাহ, পানীয় জল ও খাদ্য নিশ্চিত করা এবং ভবনসমূহের স্থিতিশীলতা পর্যালোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, ভূমিকম্প সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঝুঁকি মূল্যায়ন জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিকরা আরও সচেতন হয়ে উঠেছেন। এই ধরনের তথ্যভিত্তিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ভূমিকম্প পরবর্তী জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।