জাতীয় ডেস্ক
দেশব্যাপী প্রশাসনিক কার্যক্রম পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সরকার ১৫৮ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদায়ন করেছে। বুধবার, ২৬ নভেম্বর রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এসব কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বর্তমান প্রশাসনিক বিন্যাসে দক্ষতা পুনর্বিন্যাস, নীতি বাস্তবায়নে সমন্বয় বাড়ানো এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় তাদেরকে নতুন দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদটি স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থান, যেখানে কর্মকর্তারা সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়ন, বিধিবিধান প্রয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমন্বয় এবং মাঠ প্রশাসনের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এ কারণে ইউএনও পদে পরিবর্তন প্রশাসনিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। নতুন পদায়নের ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতিপরিকল্পনা, প্রশাসনিক সংস্কার, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সরকারি সেবা প্রদানের কাজে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তারা যুক্ত হবেন বলে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এই রদবদলের আগে একই দিন পৃথক আরেকটি আদেশে সরকার ১৬৬ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে দেশের ১৬৬টি উপজেলায় নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফলে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নতুন কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে যোগ দিচ্ছেন এবং মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যুক্ত হচ্ছেন। প্রশাসন কাঠামোর এই সমন্বয়কে চলমান নীতি বাস্তবায়ন ও সার্বিক প্রশাসনিক চাহিদার প্রেক্ষিতে একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা বদলি ও পদায়ন সাধারণত বার্ষিক পরিকল্পনা, প্রশাসনিক প্রয়োজন, কর্মদক্ষতা এবং চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অগ্রগতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি কার্যক্রমের প্রবাহ, উন্নয়ন প্রকল্পের গতি, সেবাদান ব্যবস্থা এবং মাঠপর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে থাকে। নতুন ইউএনও নিয়োগের ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসনে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটবে, যা নতুন পরিকল্পনা, কার্যসম্পাদন পদ্ধতি এবং দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
অন্যদিকে, যেসব কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে যোগ দিচ্ছেন, তারা নীতি প্রণয়ন, প্রশাসনিক সমন্বয়, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, বাজেট বাস্তবায়ন, জনসেবা পরিকল্পনা এবং মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সেবা কাঠামো উন্নয়ন, নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং সরকারি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ব্যাপক রদবদলের ফলে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যায় পর্যন্ত কাঠামোগত সমন্বয়ের নতুন ধাপ তৈরি হবে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসতে পারে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয় আরও সুসংহত হতে পারে। নতুন কর্মকর্তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর উপজেলা পর্যায়ে চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি, বিভিন্ন সরকারি সেবা কার্যক্রমের তদারকি এবং স্থানীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব গ্রহণের সময়সীমা থাকায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলো ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তর এবং নতুন কর্মস্থলে যোগদানের প্রক্রিয়া শেষ হলে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নতুন কাঠামো কার্যকর হবে।