অনলাইন ডেস্ক
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগর, ভারত ও ভুটানে তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এনসিএসের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে ভারতের মণিপুরের পশ্চিমাঞ্চলীয় নোনেতে ৩.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির ২৬ কিলোমিটার গভীরে।
এর আগে, রাত ২টা ৫৯ মিনিটে বঙ্গোপসাগরে ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। একইভাবে, বুধবার রাত ১১টা ৩২ মিনিটে ভুটানে ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এই ভূমিকম্পগুলোর কারণে স্থানীয় এলাকায় কিছু কম্পন অনুভূত হলেও কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু তথ্য প্রকাশিত হলেও, সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, সিলেটে কোনো ভূমিকম্প রেকর্ড হয়নি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, সিলেট ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে কম্পন অনুভূত হয়েছে, তা মূলত মণিপুরে হওয়া ৩.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাব।
ভূমিকম্প সম্পর্কিত তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। মণিপুরের নোনে এলাকা ভূমিকম্প সক্রিয় জোনের মধ্যে পড়ে, যা নিয়মিত ছোটখাটো ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটায়। বঙ্গোপসাগরের ভূমিকম্প সাধারণত সমুদ্রের গভীরে হয় এবং সামুদ্রিক ভূমিকম্প প্রায়শই স্থানীয় তীরে কম্পন অনুভূত করায়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ধরনের মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয় না, তবে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় সচেতন থাকা জরুরি। বিশেষ করে ঘরবাড়ি, স্কুল ও হাসপাতালসহ জনবহুল এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া, ক্ষুদ্র ভূমিকম্পগুলো বৃহৎ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসাবেও বিবেচিত হতে পারে, তাই স্থানীয় প্রশাসন এবং জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ভূমিকম্পের প্রভাব সাধারণত সীমিত থাকে। তবে ভারতীয় ভূমিকম্পের তথ্য নজরদারিতে রাখা হয় এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় আবহাওয়া ও ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো নিয়মিত আপডেট দিয়ে জনগণকে সচেতন রাখে।
পেশাদার ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এই তিনটি ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছেন, উৎপত্তিস্থল, মাত্রা এবং গভীরতার ভিত্তিতে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে, পূর্ববর্তী ইতিহাস থেকে জানা যায়, মধুপুর ফল্টসহ দেশের কিছু ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে চাপ জমে থাকলে ভবিষ্যতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকে। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও বিজ্ঞানী দলগুলো এই ধরনের ভূমিকম্পের উপর নজর রাখার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে।
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষকে স্থায়ী আতঙ্কিত না হয়ে সরকারি নির্দেশনা ও সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভূমিকম্প সম্পর্কিত জরুরি নম্বর ও স্থানীয় উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি প্রশাসনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে, যাতে কোনো বিপর্যয় ঘটলে তা দ্রুত মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।