জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও অতিরিক্ত গণভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের সার্বিক প্রস্তুতি ও সময় ব্যবস্থাপনার প্রায়োগিক মূল্যায়ন শুরু করেছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত মক ভোটিং বা ভোট মহড়া পরিদর্শনকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, গণভোটে হ্যাঁ/না ভিত্তিক বান্ডেল প্রশ্নের বাইরে কোনো বিকল্প থাকবে না।
সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, এই মক ভোটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো বাস্তবে একটি আদর্শ পোলিং সেন্টারের কার্যক্রম পরীক্ষা করা। ভোটারদের কিউ, পোলিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের কার্যক্রম, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি—এসবের মধ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতি কমিশন প্র্যাকটিক্যাল ডেমনস্ট্রেশনের মাধ্যমে যাচাই করছে। নতুন ভোটারসহ অনেকের ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকায় মক ভোটিং তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি এবার অতিরিক্ত গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় সময় ব্যবস্থাপনা আরও জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কমিশন ভোট গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ার সক্ষমতা পরিমাপ করছে। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়, কিন্তু এবার গণভোটের সংযোজনের ফলে ৪২ হাজার ৫০০ পোলিং সেন্টারের যথেষ্টতা নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
সিইসি উল্লেখ করেন, আজকের রিয়েল টাইম মূল্যায়নের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে বুথ বা কেন্দ্র বাড়ানো হবে কি না। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বুথ খোলা হবে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হবে অতিরিক্ত জনবল, ভোট বাক্স, লজিস্টিক ও ব্যয়। তবে কমিশন এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে সময় ব্যবস্থাপনা ও জনসেবার দিক থেকে।
ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় এড়াতে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন শেষে দ্রুত বাইরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে ধাক্কাধাক্কি বা ভিড় ভোটগ্রহণ ব্যাহত করতে পারে, যা প্রতিরোধ করা জরুরি। সাধারণ অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর ঘটনা মক ভোটিংয়ে চিহ্নিত হয়েছে, এবং কমিশন এটি সম্পূর্ণরূপে মূল্যায়ন করে ঘাটতি পূরণ করবে।
সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গে সিইসি জানান, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনোই সম্পূর্ণ নিখুঁত ছিল না এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা সবসময় ঘটবেই। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীসহ সব নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে ইসি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। পূর্বে কমিশন নিজেও নিরাপত্তাহীনতার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যা এখন অনেকাংশে সমাধান হয়েছে।
গণভোটের প্রচারণার বিষয়ে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট আইন পাস হয়েছে এবং কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। প্রচারণা কার্যক্রম শুরু হবে, যার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে। গণভোটে চারটি প্রশ্ন থাকলেও ভোট হবে হ্যাঁ বা না ভিত্তিতে। আইন অনুযায়ী প্রশ্নগুলো একসঙ্গে বান্ডেল করা হয়েছে এবং পৃথকভাবে ভোট দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সিইসি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তিনি জানান, কমিশন মোটামুটি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং দেশের নাগরিকদের জন্য অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে।