জেলা প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে যুক্ত থেকে তারুণ্যের নেতৃত্বে রাজনীতি এগিয়ে নিতে হবে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ মিনি স্টেডিয়ামে জামায়াতে ইসলামের আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব সমাবেশে তিনি এসব বক্তব্য দেন।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে আবু সাদিক কায়েম বলেন, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা পরিবর্তনে তরুণদের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন যে বিদেশে অবস্থান করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রচেষ্টা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাঁর দাবি, দেশের রাজনীতিকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী চালিত করতে হলে যথাযথভাবে জনগণের কাছে এসে, তাঁদের ভাষা ও বাস্তবতা বুঝে রাজনীতি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও ন্যায়পরায়ণতার কাঠামো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক বিভেদের প্রভাবেও বিভিন্ন জনমুখী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ পায়। তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারেনি, যার মূল কারণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর পারস্পরিক দূরত্ব এবং ঐক্যের অভাব।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দায়িত্ব তাঁদের হাতেই ন্যস্ত। তাই রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে তরুণদের মতামত, সক্ষমতা ও নতুন চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁর মতে, নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে আদর্শ, ন্যায়বিচার এবং জনগণের সম্পৃক্ততা সব দলের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সমাবেশের অন্যান্য বক্তারা দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক কর্মকৌশল এবং তরুণদের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা, নৈতিকতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার সমন্বয় প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিসরে পরিবর্তন আনতে তরুণদের সুসংগঠিত ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সাবেক সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন বলেন, সমাবেশ তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। তিনি তরুণদের সমাজ-রাষ্ট্রবিষয়ক উপলব্ধি প্রসারিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের বোঝাপড়া ও সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরির মাধ্যমে তরুণরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে সফল হতে পারে।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা জরুরি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উচিত জনগণের মৌলিক সমস্যা, বিশেষ করে শিক্ষার মানোন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া।
সমাবেশে বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দীর্ঘদিন ধরে যে অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা এবং বিভাজন দেখা যাচ্ছে, তা কাটিয়ে উঠতে হলে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাঁদের মতে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি তরুণদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা বিস্তৃত করা জরুরি।
এ ধরনের সমাবেশের মাধ্যমে তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়লে ভবিষ্যৎ নির্বাচন, নীতিনির্ধারণ ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলোতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতামত প্রতিফলিত হবে বলে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন। তাঁরা আরও বলেন, সংগঠিত রাজনৈতিক চর্চা এবং ন্যায়বিচারকেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গতি আনতে পারে।
পীরগঞ্জে আয়োজিত এই সমাবেশকে ঘিরে স্থানীয় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তারা বক্তাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চিত্র নিয়ে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেন। বক্তারা দাবি করেন, দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতিতে স্থানীয় পর্যায়ের এই ধরনের অংশগ্রহণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি আরও সুসংগঠিত হবে।