জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে এনসিপির রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির সাবেক সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেন। তাঁর দাবি, দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে চলমান অসন্তোষ ও স্থানীয় নেতৃত্বের বিরোধ থেকেই এই অবস্থান এসেছে।
মোতালেব হোসেন ফেসবুকে দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, এনসিপির রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে বহিষ্কার না করায় তারা সারজিস আলমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে ২৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণা দেয়। ঘোষণার পর দলের একটি অংশ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে অন্য দলের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ তোলে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তির চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সাইফুল ইসলামকে এনসিপিতে অন্তর্ভুক্ত করেন রাজশাহী বিভাগের সংগঠক ইমরান ইমন এবং তাকেই জেলা আহ্বায়ক হিসেবে পদায়ন করা হয়। মোতালেব হোসেন অভিযোগ করেন, সারজিস আলমের সঙ্গে ইমরান ইমনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং বিষয়টি বহুবার জানানো হলেও সারজিস আলম কোনো ব্যবস্থা নেননি। এতে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা রাজশাহীর স্থানীয় রাজনীতির সংবেদনশীল বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এনসিপির রাজশাহী কমিটিকে কেন্দ্র করে দলীয় সংকট নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন পরিচালনা, নেতৃত্ব নির্বাচন এবং কর্মকাণ্ডের গতিধারা নিয়ে একাধিকবার মতবিরোধ দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত এবং জেলা পর্যায়ের প্রত্যাশার মধ্যে ব্যবধান বাড়তে থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রশ্ন তোলার ঘটনা সামনে আসে।
মোতালেব হোসেন তাঁর স্ট্যাটাসে আরও লেখেন যে, বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানানো হলেও কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তাঁর দাবি, রাজশাহী জেলার সংগঠনকে শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য করতে স্থানীয় নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তথ্য যাচাই না করে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হলে স্থানীয়ভাবে বিভ্রান্তি ও আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে, যা বর্তমানে রাজশাহীতে এনসিপিকে ঘিরে দেখা যাচ্ছে।
রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য নতুন নয়। বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব নির্ধারণ, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব থাকলে দলীয় বিভাজন বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব সমাধান না হলে তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলতে পারে। এনসিপির রাজশাহীর পরিস্থিতি সেই প্রেক্ষাপটকেই প্রতিফলিত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া ঘোষণার পর স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থার কথা বললেও, অপর অংশ স্বচ্ছতা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার দাবি তুলছেন। সারজিস আলমকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার দাবি উত্থাপনের পর রাজশাহী জেলা কমিটির কার্যক্রম কতটা প্রভাবিত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
এ বিষয়ে মোতালেব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সারজিস আলমের বিরুদ্ধে তাদের এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে। তিনি দাবি করেন, সাইফুল ইসলামের বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা রাজশাহী জেলায় পুরো সংগঠনকেই ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আস্থার বিষয়ে স্পষ্ট মতবিরোধে রয়েছেন।
রাজশাহীতে এনসিপির সাংগঠনিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম এখন কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। বর্তমানে সৃষ্ট পরিস্থিতি দলটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—কীভাবে স্থানীয় নেতৃত্ব নির্বাচন, অভিযোগ যাচাই এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা পুনঃস্থাপনই এখন এনসিপির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।