নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের চকরিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি মহিলা সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ-বিদেশে ব্যাপক স্বীকৃতি পাবে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে ভোটাররাই নিজেদের ভোটাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর শহীদ হোছাইন চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মহিলা সমাবেশে তিনি এসব বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন খুব শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচন হবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ঘোরা ঘটনা, যেখানে জনগণ প্রত্যাশা ও আস্থার ভিত্তিতে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেবে। তিনি উল্লেখ করেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম, মাঠপর্যায়ের যোগাযোগ ও জনসম্পৃক্ততা ভোটারদের আগ্রহ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, দীর্ঘ সময় ধরে দেশের মানুষ ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তিনি বলেন, গত এক যুগেরও বেশি সময় রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। তাঁর অভিযোগ, সাংবিধানিক কাঠামো বহাল থাকলেও কার্যত গণতান্ত্রিক চর্চা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া ভেঙে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হবে আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, যা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে।
সমাবেশে তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নেতৃত্বের রদবদল দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব এবং দলগুলোর পুনর্গঠন ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণ ও শাসন ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে। দেশে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালীকরণকে সামনে রেখে তিনি ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস দেশের অর্থনীতি, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং নির্বাচনি পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নেতৃত্ব সংকট একদিকে চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও অন্যদিকে জনগণের আগ্রহ বাড়িয়েছে, যা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা বর্তমানে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত এবং ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময় চলছে। এসব কার্যক্রম নির্বাচনি উত্তাপ বাড়াচ্ছে এবং প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করছে। তাঁর মতে, মাঠপর্যায়ে দলের উপস্থিতি জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখছে।
সমাবেশে বিএনপি নেতারা দেশের বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভোটারদের প্রত্যাশা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রস্তুতি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, মাঠপর্যায়ের সংগঠনকে শক্তিশালী করা হচ্ছে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হলে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে আসবেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলীসহ স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য নেতারা। বক্তারা স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিয়নে চলমান গণসংযোগ, পথসভা ও প্রচারণার কথা তুলে ধরেন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা সম্পর্কে মন্তব্য করেন।
এর আগে সালাহউদ্দিন আহমদ চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী, কাকারা, লক্ষ্যারচর ও বরইতলী ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন এবং সেখানে স্থানীয় বাসিন্দা ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বিভিন্ন পথসভায় দলীয় অবস্থান, নির্বাচনি পরিকল্পনা এবং মাঠপর্যায়ের সংগঠনকে সক্রিয় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন।