নিজস্ব প্রতিবেদক
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় পাকিস্তানের লাহোর প্রথম স্থানে উঠে এসেছে, যেখানে বায়ুমান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ৩১২ রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, যেখানে স্কোর ছিল ২৪২, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রকাশিত তাৎক্ষণিক তথ্যে এসব তথ্য জানায়। শহরভিত্তিক দূষণের এ তালিকা বিশ্বের বিভিন্ন মহানগরের বাতাসের গুণগত মান সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি প্রতি ঘণ্টায় বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডসহ অন্যান্য দূষণকারী উপাদানের মাত্রা বিশ্লেষণ করে স্কোর নির্ধারণ করে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি, যেখানে বায়ুমান সূচক ২৪৯ রেকর্ড করা হয়। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা, যার স্কোর ২০৭। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়, যেখানে বায়ুমান সূচক ছিল ২০০। এশিয়ার বড় শহরগুলোতে একই সময় দূষণের মাত্রা উচ্চ পর্যায়ে থাকায় এ অঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশগত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা সাধারণত বৃদ্ধি পায়। শুষ্ক আবহাওয়া, তাপমাত্রার বিপরীত স্তর তৈরি হওয়া (টেম্পারেচার ইনভার্সন), যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্পকারখানার নির্গমন এবং নির্মাণকাজ থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি বাতাসে দীর্ঘ সময় স্থায়ী থাকার কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষ করে বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে এই প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বাতাসের মান ‘ভালো’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা ‘মাঝারি’ পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত স্কোর ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০১ থেকে ৩০০ স্কোর থাকলে তা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ঢাকার সাম্প্রতিক বায়ুমান পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দীর্ঘ সময় দূষিত বাতাসে অবস্থান শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতা, হাঁপানি, ফুসফুসজনিত সমস্যা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্টে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের নির্গমন হ্রাস, শিল্পকারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং নগরায়নের সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।