জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না তা পর্যালোচনার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিস্তারিত আলোচনা শুরু করেছে। রবিবার সকালে অনুষ্ঠিত কমিশনের ১০তম সভায় প্রস্তুতির সর্বশেষ অগ্রগতি, প্রশাসনিক সমন্বয় এবং আইনগত প্রক্রিয়ার নানা দিক পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকের পর যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং বিভিন্ন শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তফসিল ঘোষণার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে কমিশনের কর্মপরিকল্পনা, মাঠ পর্যায়ের সমন্বয় ব্যবস্থা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন-সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং নির্বাচন সামগ্রী ব্যবস্থাপনা—সবগুলো বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। কমিশনের মতে, এসব প্রস্তুতি সময়মতো সম্পন্ন হওয়া তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনকে নিশ্চিত করবে।
আইন ও রীতির আলোকে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কার্যক্রম বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি ছিল। তফসিল ঘোষণার আগে সংবিধান, নির্বাচন কমিশন আইন এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী যেসব প্রশাসনিক ও কারিগরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, সেগুলোর অগ্রগতি যাচাই করা হয়। পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগ, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, আপিল নিষ্পত্তি এবং ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন সার্বিক আলোচনা করে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই পর্যায়ের প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজনে সার্বিক প্রস্তুতির অবস্থা বৈঠকে পৃথকভাবে পর্যালোচনা করা হয়। নির্বাচন কমিশন গত কয়েক মাস ধরে ভোটকেন্দ্র তালিকা হালনাগাদ, ইভিএম বা ব্যালটের ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়, প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ প্রশিক্ষণ, পরিবহন ব্যবস্থা এবং দায়িত্ব বণ্টন–সংক্রান্ত নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এসব প্রস্তুতির বাস্তব অগ্রগতি, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং সময়মতো সম্পন্ন করার সক্ষমতা যাচাই করা হয়। গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকার ব্যবহার, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ও গণনার প্রক্রিয়া—এসব বিষয়ের সমন্বয়ও আলোচনায় উঠে আসে।
মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় জোরদার করার ওপর সভায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, প্রস্তুতির অগ্রগতি প্রতিবেদন গ্রহণ এবং মাঠপর্যায়ের সুপারিশ কার্যকরভাবে বিবেচনায় নেওয়ার ওপর কমিশন গুরুত্ব আরোপ করে। বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত হলে ভোটগ্রহণের দিন শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সহজ হবে বলে কমিশন মনে করে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় বৈঠকে আলোচনা হয়। যেসব দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আছে বা নিবন্ধনের বিভিন্ন শর্ত পূরণ করেছে বলে কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে, তাদের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করতে চাইছে যে নিবন্ধিত দলগুলো আইনি শর্ত ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা পূরণ করছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন, প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়নের অগ্রগতি বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াতে এনআইডি সেবা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করাকে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার জন্য এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সময়োপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মক ভোটের অভিজ্ঞতা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পরিচালিত মক ভোটের মাধ্যমে যে প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা পাওয়া গেছে, সেসব থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ মূল্যায়ন করে কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও সুসংহত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মক ভোটে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভোটারদের অভিজ্ঞতা, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, সেগুলোর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশন-সংক্রান্ত কার্যক্রম, প্রয়োজনীয় মেশিন হস্তান্তর, বকেয়া বিল পরিশোধ এবং সংশ্লিষ্ট ক্রয় প্যাকেজের চুক্তি সম্পন্ন–সম্পর্কিত বিষয়গুলোও বৈঠকে আলোচনা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডার ও পরিচয় ব্যবস্থাপনাকে সুদৃঢ় করতে স্মার্ট কার্ড সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং আর্থিক প্রক্রিয়ার সঠিকতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে আলোচ্যসূচির পাশাপাশি নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি—আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসনিক পরিকল্পনা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং লজিস্টিকস—এসব বিষয়েও কমিশন মূল্যায়ন করে। তফসিল ঘোষণার পর সুনির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী দ্রুত বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পন্ন করার জন্য কমিশন ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রস্তুত করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে আলোচিত প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্তসমূহ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে নির্বাচন কমিশন যেকোনো দিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। কমিশনের লক্ষ্য হলো সময়মতো জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের জন্য সকল প্রশাসনিক, আইনি ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।