অনুষ্ঠানে দলটির নীতিনির্ধারণী কর্মসূচির দিকনির্দেশনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে অসাম্প্রদায়িকতা ও সমতার আদর্শ ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলে ছিল সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমঅধিকার ও অংশগ্রহণের ধারণা। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো ধরনের বিভাজনমূলক কার্যক্রম জাতির সেই মৌলিক আদর্শের পরিপন্থী বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, দেশের বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিএনপি দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা কার্যক্রম শুরু করেছে। দলের নেতৃত্ব মনে করে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামো তৈরির উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে দলের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে অধিকতর ধারণা অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে।
মির্জা ফখরুল তাঁর বক্তব্যে বিভিন্ন সংগঠনিক চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন। তিনি ছাত্রদলের কার্যক্রমের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, দলের বিভিন্ন পরিকল্পনা基层 পর্যায়ে পর্যাপ্তভাবে পৌঁছাতে পারেনি। তাঁর মতে, রাজনৈতিক সংগঠনের অন্যতম প্রধান শক্তি হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কার্যক্রম; তাই ছাত্র সংগঠনের কাঠামোকে আরও সক্রিয় ও সংগঠিত করা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন যে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে দল প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পেছনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংগঠনিক উপস্থিতির ঘাটতি অন্যতম কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টিকে থাকতে হলে সংগঠনের প্রতিটি স্তরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সদস্যদের মাঝে দায়িত্ববোধ বাড়ানো এবং নীতিনির্ধারিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর তিনি জোর দেন। তাঁর মতে, দলীয় তৎপরতা শক্তিশালী না হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্যোগ ও প্রচারণা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় না, যা দীর্ঘমেয়াদে সাংগঠনিক কাঠামোকে দুর্বল করে।
বক্তব্যে দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের সুযোগ এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের প্রসঙ্গও আসে। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব কর্মসূচি ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ পেলে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। এ ধরনের উদ্যোগ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সুসংহত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বিএনপি মনে করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে, যা জাতীয় অগ্রগতির পূর্বশর্ত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দলের নেতারা জানান, চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা মনে করেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান সামাজিক-অর্থনৈতিক চাহিদা ও সমস্যাগুলো সম্পর্কে সরাসরি ধারণা পাওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরও বাস্তবমুখী করে তুলবে। দলীয় নেতৃত্ব আশা প্রকাশ করে যে এই কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নীতিনির্ধারণী কাঠামো আরও সুসংহত হবে।
মির্জা ফখরুল তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া দলকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি আহ্বান জানান, সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনগণের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তাঁর মতে, দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় উন্নয়ন ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।