জাতীয় ডেস্ক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যাচ্ছেন। দুপুরে কমিশন সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও সার্বিক প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, এটি একটি প্রথাগত সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও দেশের সামনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি হিসেবে কমিশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করবে। তিনি বলেন, কমিশন তার দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করতে চায় এবং এই ধরনের সাক্ষাৎ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে সুসংহত করতে সহায়ক হয়। সাক্ষাতের পরবর্তী উপলক্ষে তিনি আরো জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতেরও সময় নির্ধারিত আছে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে চলমান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সমন্বয়, জনবল ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং ভোটকেন্দ্র পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো আগেভাগে চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। তাই নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রধান সব পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ এবং সমন্বয় জোরদার করতে কমিশন বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।
ইতোমধ্যে নতুনভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর শপথ গ্রহণ করে। এএমএম নাসির উদ্দিনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কমিশনের চার সদস্য হলেন—আব্দুর রহমানেল মাছউদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আখতার আহমেদ। নতুন কমিশন শপথ নেওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী কাঠামো, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিগত বিষয়ে কাজ শুরু করে।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ, ভোটগ্রহণ ও গণনা তদারকি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়, বিদেশি পর্যবেক্ষ delegations-এর কার্যক্রম অনুমোদনসহ বিভিন্ন বিষয়। বিশেষ করে নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের ক্ষেত্রে সম্পদের বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা আরও বিস্তৃত হবে। ফলে সময়মতো প্রস্তুতি গ্রহণ কমিশনের জন্য অগ্রাধিকার।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকে কমিশন একটি প্রাথমিক সমন্বয় আলোচনার অংশ হিসেবে দেখছে, যেখানে নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে ধারণা বিনিময় হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন নীতিগত ও প্রশাসনিক প্রয়োজন বিষয়ে সমর্থন দিতে পারে এবং দু’পক্ষের সমন্বয় নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর হওয়ায় ভূমিকা রাখবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমিশনের বিভিন্ন অগ্রগতি, বিশেষ করে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা, সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ এবং তদারকি কার্যক্রমে গতি আসবে। কমিশন ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি যাচাই এবং নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে।
আজকের সৌজন্য সাক্ষাৎ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাক্ষাৎ শেষে কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপগুলো বাস্তবায়নে তার পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।