খেলাধুলা ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে (আইএলটি২০) দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেই উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন বাংলাদেশি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। দল পরাজিত হলেও বল হাতে তার নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও দুই উইকেট দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
গতকাল দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ম্যাচে মোস্তাফিজ আইএলটি২০–তে তার অভিষেক উদ্যাপন করেন গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে। ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তিনি। গালফ জায়ান্টসের ওপেনার আফগানিস্তানের রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করে তিনি শুরুতেই চাপ সৃষ্টি করেন। প্রথম ওভারে ১১ রান দিলেও গুরুত্বপূর্ণ এই উইকেট দলকে প্রাথমিক সুবিধা এনে দেয়।
দুবাই ক্যাপিটালস আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১৬০ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায়। দলের শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা দ্রুত উইকেট হারালেও মাঝের সারির কয়েকজন ব্যাটসম্যান দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেন। তবে প্রয়োজনীয় বড় ইনিংসের অভাবে তারা প্রত্যাশিত স্কোরের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। নির্ধারিত ওভারে ১৬০ রান সংগ্রহ করেও দলটি জয়ের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি, যা শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফলের ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নামা গালফ জায়ান্টস শুরু থেকে আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। ইনিংসের প্রথম দিকে কয়েকটি উইকেট হারালেও একপ্রান্ত ধরে রেখে রান তোলার গতি কমতে দেননি দুই সেট ব্যাটসম্যান। মোস্তাফিজ তার দ্বিতীয় ওভারেও সম্ভাব্য উইকেট সৃষ্টি করেছিলেন। জেমস ভিন্স তার বলে একটি সহজ ক্যাচ তুলেছিলেন, তবে ফিল্ডার ডেভিড উইলি ক্যাচটি নিতে ব্যর্থ হন। ক্যাচ মিস হওয়ায় চাপ বাড়ার বদলে ভিন্স চার রানে বাঁচেন এবং পরবর্তীতে ইনিংসটি বড় করতে সক্ষম হন। ওই ওভারে মোস্তাফিজ ১০ রান খরচ করেন।
ম্যাচের ১২তম ওভারে আবারো আক্রমণে এসে মোস্তাফিজ দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন। সেট ব্যাটসম্যান পাতুম নিশাঙ্কাকে মাত্র ২ রানের ক্ষতিতে আউট করান তিনি। নিশাঙ্কা এর আগে অর্ধশতক সম্পূর্ণ করেছিলেন এবং উইকেটটি ম্যাচের মোড় ঘোরাতে পারত। ওই ওভারে মোস্তাফিজের শৃঙ্খলাপূর্ণ বোলিং গালফ জায়ান্টসের রানের গতি সাময়িকভাবে কমিয়ে দেয়।
১৬তম ওভারে মোস্তাফিজ মাত্র ৩ রান দেন, যা চাপ সৃষ্টি করেছিল প্রতিপক্ষের ওপর। প্রথম দুই ওভারে যেখানে তিনি ২১ রান দিয়েছিলেন, শেষ দুই ওভারে সেই রান কমে দাঁড়ায় মাত্র ৫–এ। চার ওভার শেষে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ২৬ রানে ২ উইকেট। পাশাপাশি তিনি ফিল্ডিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং দুটি নির্ভরযোগ্য ক্যাচ ধরেন।
মোস্তাফিজের বোলিং কোটা শেষ হওয়ার সময় গালফ জায়ান্টসের প্রয়োজন ছিল ২৪ বলে ২৯ রান। ম্যাচের অবশিষ্ট অংশে স্বাগতিক দলের বোলাররা চাপ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। সেট ব্যাটসম্যান ভিন্স ও সঙ্গী ব্যাটসম্যানরা রান তোলার চাপ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছান। প্রয়োজনীয় রান তাড়া করতে গিয়ে গালফ জায়ান্টস ৭ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে।
ম্যাচে গালফ জায়ান্টসের হয়ে পাতুম নিশাঙ্কা ৩১ বলে ৬৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসই দলের জয়ের অন্যতম ভিত্তি গড়ে দেয়। এই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই তিনি ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন। নিশাঙ্কার দ্রুত রান তোলা এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বাউন্ডারি খোঁজার সক্ষমতা দুবাই ক্যাপিটালসের বোলারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়।
দুবাই ক্যাপিটালসের পরাজয় সত্ত্বেও মোস্তাফিজের বোলিং দলের জন্য ইতিবাচক দিক হিসেবে উঠে এসেছে। নতুন পরিবেশে প্রথম ম্যাচেই এমন নিয়ন্ত্রিত ও কার্যকর বোলিং ভবিষ্যতে দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে তার ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। আসন্ন ম্যাচগুলোতে তার অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্য ডেথ বোলিং দলের জন্য বাড়তি শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টুর্নামেন্টের বাকি অংশে দুবাই ক্যাপিটালসের পারফরম্যান্স অনেকটাই নির্ভর করবে বোলারদের ওপর—বিশেষ করে শেষের ওভারে রান সীমিত রাখার দক্ষতার ওপর। অন্যদিকে, ব্যাটিং বিভাগেও বড় ইনিংস খেলার দায়িত্বশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। মোস্তাফিজুর রহমানের সফল অভিষেক দলকে মানসিকভাবে শক্তি দেয়ার পাশাপাশি তাকে ব্যক্তিগতভাবে টুর্নামেন্টে এগিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।