জেলা প্রতিনিধি
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিতব্য মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান বলেছেন, ভোলা সেতু নির্মাণের কাজ আগামী সরকার বাস্তবায়ন করবে এবং ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় এ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে মীরগঞ্জ সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। সেতুটি নির্মাণ হলে বরিশাল সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে মেঘনার পাড়ের মুলাদী ও হিজলা উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং মেহেন্দীগঞ্জের সঙ্গে পরোক্ষ সংযোগ স্থাপন আরও সহজ হবে। ফলে অঞ্চলের পণ্য পরিবহন, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান অনুষ্ঠানে বলেন যে জাতীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি মৌলিক অংশ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন রাষ্ট্রের সুষ্ঠু প্রশাসন এবং জনগণের আস্থা নিশ্চিত করে। এজন্য নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করছে এবং নির্বাচন কমিশন যেসব নির্দেশনা দেবে তা বাস্তবায়নে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ সময় তিনি আরও জানান, বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন টানাপড়েন, স্থানীয় জটিলতা ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে সময় বৃদ্ধি পেলে ব্যয়ও বাড়ে। এসব কারণে প্রকল্প পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা এবং সমন্বয় প্রয়োজন। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন প্রকল্প সুরক্ষায় ও সফলভাবে এগিয়ে নিতে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।
নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন প্রকল্প চলাকালে চাঁদাবাজি, প্রকল্প সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা এবং স্থানীয় বিরোধের কারণে কাজ ব্যাহত হয়। এর ফলে প্রকল্পের মান, নিরাপত্তা এবং সময়সীমা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রকল্প-সম্পর্কিত সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
সেতুটির সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক উপজেলা নদীপথনির্ভর যোগাযোগের ওপর নির্ভরশীল। নদী পারাপার, ভরা মৌসুমে নৌপথের সংকট, ফেরিঘাটে দীর্ঘ অপেক্ষা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। মীরগঞ্জ সেতু নির্মাণ হলে এসব সমস্যার উল্লেখযোগ্য অংশ দূর হবে। একই সঙ্গে জরুরি সময়ে চিকিৎসা, খাদ্যপণ্য পরিবহনসহ জনসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনাও আরও দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
এ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, সেতুটি নির্মাণের পর বরিশাল অঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক নতুনভাবে বিন্যস্ত হবে, মুলাদী ও হিজলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে উঠবে এবং বরিশাল সদর দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের সময় কমে আসবে। এছাড়া স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য পণ্যের দ্রুত বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে, যা উৎপাদকদের আর্থিক সুবিধা বাড়াবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষামূলক পরিবেশ এবং নির্মাণ সামগ্রীর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
মীরগঞ্জ সেতুর নির্মাণ শুরু হওয়াকে বরিশাল ও আশপাশের উপজেলাগুলোর সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।