1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
বিএনপির সমাপনী কর্মসূচিতে তারেক রহমানের বক্তব্যে দুর্নীতি দমন ও গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর খাদ্যে রাসায়নিক দূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার স্মৃতি মান্ধানা ও পলাশ মুচ্ছলের বিয়ে ভাঙার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি ৫৬১ টাইফয়েড টিকা অভিযানে দেশে ৪ কোটি ২৫ লাখের বেশি শিশুর সুরক্ষা নির্বাচনের আগের রাতে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে আসছে অগ্রগতি এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব মোস্তাফিজের সফল অভিষেকেও দুবাই ক্যাপিটালসের পরাজয়

টাইফয়েড টিকা অভিযানে দেশে ৪ কোটি ২৫ লাখের বেশি শিশুর সুরক্ষা

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৪ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোববার প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ জানিয়েছে, দেশজুড়ে টাইফয়েড প্রতিরোধে পরিচালিত টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন–২০২৫ এ ৪ কোটি ২৫ লাখের বেশি শিশুকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, এ অর্জন শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশের সক্ষমতা ও প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এ টিকাদান কার্যক্রমে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ইউনিসেফের তথ্যমতে, দেশের ৯৭ শতাংশের বেশি শিশুকে এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যা এটিকে বৈশ্বিক পরিসরেও একটি বড় সফলতা হিসেবে চিহ্নিত করছে। বর্তমানে বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশ এ ধরনের বিস্তৃত টিসিভি টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

টাইফয়েড বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ শিশুদের এই ব্যাধির ঝুঁকির মধ্যে রাখে। ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) অনুসারে, দেশে মাত্র ৩৯.৩ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির ব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে। পানির বিভিন্ন উৎস এবং গৃহস্থালি পর্যায়ে ব্যবহৃত পানির নমুনা বিশ্লেষণে বিপুল পরিমাণ ই. কোলাই দূষণ পাওয়া গেছে, যা শিশুদের টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, নিরাপদ পানি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত টিসিভি শিশুদের সুরক্ষার অন্যতম কার্যকর উপায়। তিনি উল্লেখ করেন, যেসব শিশুরা নিয়মিতভাবে দূষিত পানি ব্যবহারের ঝুঁকিতে থাকে, তাদের জন্য সময়মতো টিকাদান অত্যন্ত জরুরি। এ কারণে জাতীয় পর্যায়ে এ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ইউনিসেফ জানায়, টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে তারা সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ, কোল্ড চেইন অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন কোল্ড রুম স্থাপন এবং ভ্যাক্সইপিআই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সঠিক সময়ে টিকা পৌঁছানোর সহায়তা। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচিও বাস্তবায়িত হয়েছে, যাতে টিকাদানের প্রতিটি ধাপ নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা যায়।

অভিযানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল জনসচেতনতা। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়, যোগাযোগ কার্যক্রম বিস্তার এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্যভিত্তিক বার্তা প্রচারের মাধ্যমে ১২ কোটির বেশি মানুষের কাছে টিসিভি সম্পর্কে সচেতনতা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এর ফলে অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং শিশুদের টিকাদানে অংশগ্রহণ সহজ হয়।

টিকার আওতা নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী দুর্গম অঞ্চল, উপকূলীয় জনপদ, পাহাড়ি এলাকা, জলাভূমি, চা-বাগান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসতি পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ পরিবার, কওমি মাদরাসা ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৪ লাখ ২৪ হাজার শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই), গ্যাভি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অবদান উল্লেখ করে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, টিকাদান কর্মসূচিকে সফল করতে সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা ভূমিকা রেখেছে। তিনি আরও জানান, সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য প্রচার সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, যা বিভিন্ন গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ টিকাদান কর্মসূচি দেশের শিশুস্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। টাইফয়েডের প্রকোপ হ্রাস পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে শিশুমৃত্যু ও জটিলতার হার কমে আসতে পারে। একই সঙ্গে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টার সঙ্গে এ কর্মসূচির সমন্বয় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, টিসিভির জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি ভবিষ্যতে নিয়মিত টিকাদান তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা বিবেচনায় রয়েছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের টাইফয়েড প্রতিরোধে কাঠামোগত সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হবে।

টিকাদান অভিযানের সার্বিক সাফল্য সম্পর্কে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, টিকা শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা, সুস্থতা ও উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে টাইফয়েডমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com