1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
বিএনপির সমাপনী কর্মসূচিতে তারেক রহমানের বক্তব্যে দুর্নীতি দমন ও গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর খাদ্যে রাসায়নিক দূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার স্মৃতি মান্ধানা ও পলাশ মুচ্ছলের বিয়ে ভাঙার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি ৫৬১ টাইফয়েড টিকা অভিযানে দেশে ৪ কোটি ২৫ লাখের বেশি শিশুর সুরক্ষা নির্বাচনের আগের রাতে সব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মীরগঞ্জ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে আসছে অগ্রগতি এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব মোস্তাফিজের সফল অভিষেকেও দুবাই ক্যাপিটালসের পরাজয়

খাদ্যে রাসায়নিক দূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৫ বার দেখা হয়েছে

জাতীয় ডেস্ক

খাদ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে দ্রুত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খাদ্যদূষণ একটি বহুমাত্রিক সমস্যা এবং এটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুস্থতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তিনি উল্লেখ করেন, পরিবারে শিশু থেকে প্রবীণ পর্যন্ত সবাই খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়া অত্যাবশ্যক। প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লিখিত প্রস্তাবনা জমা দিতে নির্দেশ দেন, যাতে বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগগুলো দ্রুত গ্রহণ করা যায়।

বৈঠকে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, জাতীয় নিরাপত্তা–সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে খাদ্যবাহিত রোগ, রাসায়নিক ও জৈব দূষণ, ভারী ধাতু, কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ এবং তেজস্ক্রিয় উপাদান সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি বিষয়ে বিশদ উপস্থাপনা করা হয়।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি শিশু। প্রতিষ্ঠানটির উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতি দশজন শিশুর মধ্যে একজন বছরে অন্তত একবার খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত শিশুদের এক-তৃতীয়াংশ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানান, খাদ্যে চার ধরনের দূষক—ভারী ধাতু, কীটনাশক বা জীবনানাশক অবশিষ্টাংশ, তেজস্ক্রিয়তা এবং জৈব দূষক—বিশেষভাবে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

পরীক্ষাগার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে ১,৭১৩টি এবং চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৮১৪টি খাদ্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট ১৮০টি নমুনার মধ্যে ২২টিতে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা বা সীসা ক্রোমেট পাওয়া গেছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, সীসা মানবদেহে প্রবেশ করলে তা মস্তিষ্ক, যকৃৎ, কিডনি ও হাড়ে জমা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও মারাত্মক, কারণ নরম হাড়ের কারণে সীসা দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। এক জরিপ অনুযায়ী দেশে সাড়ে তিন কোটি শিশু সীসা–সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া ৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরেও সীসা শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবেশ মন্ত্রণালয় ১০ বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।

বৈঠকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত পানি ও মাছের নমুনায় প্রায় ৩০০ ধরনের ওষুধ, ২০০ ধরনের কীটনাশক এবং ১৬ ধরনের পিএফএএস (চিরস্থায়ী রাসায়নিক) শনাক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব উপাদান দীর্ঘমেয়াদে মানবদেহে ক্যানসার, হরমোনজনিত জটিলতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানায়, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামারে অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মানবদেহে ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর ৭ থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত অবশিষ্টাংশ থাকতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ওই সময়সীমা পূরণ হওয়ার আগেই মুরগি বাজারজাত হওয়ায় তা মানবদেহে অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের কারণ হতে পারে।

বৈঠকে অবৈধ কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, পোল্ট্রি ফার্মের নিবিড় তদারকি, খাদ্য পরীক্ষাগারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, নমুনা পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো, বাজার ও উৎপাদন পর্যায়ের নজরদারি জোরদার—এসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উঠে আসে। অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, খাদ্য শৃঙ্খলার প্রতিটি ধাপে সুসংহত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে না পারলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।

খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনও কাঙ্ক্ষিত সুফল দেবে না। তিনি জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে জানান, ভোক্তা পর্যায়ে দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতা বাড়ানো না গেলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। একই সঙ্গে তিনি স্কুলপাঠ্যক্রমে খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দেন, যাতে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হতে পারে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সম্মিলিতভাবে মত দেন যে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারি উদ্যোগে সম্ভব নয়; উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রত্যেকের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অগ্রাধিকারভিত্তিক উদ্যোগ চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেন এবং দ্রুত অগ্রগতি মূল্যায়নেরও ঘোষণা দেন।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com