জাতীয় ডেস্ক
রোববার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সম্ভাব্য জাতীয় সরকার গঠন ও ভবিষ্যৎ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিভিন্ন মন্তব্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান দাবি করেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা ও অনিয়ম বিদ্যমান এবং তা থেকে উত্তরণে গণতান্ত্রিক শক্তি ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই দুটি খাতে অগ্রগতি না হলে নারী উন্নয়ন, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে প্রণীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে। তিনি মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান গ্রহণ করতে সক্ষম রাজনৈতিক কাঠামো গঠন করাই সময়ের দাবি।
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি সরকারে থাকাকালে দলটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিএনপির বিরুদ্ধে উত্থাপিত কিছু অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি। তবে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখতে ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসে।
জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি জানান, অতীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জাতীয় সরকার গঠনের আলোচনা উঠেছিল। তবে তখন বিএনপি জনগণের রায়কে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস জনগণ হওয়ায় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে জনগণের মতামতই প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে সহায়ক।
অন্য রাজনৈতিক দলসমূহের অতীত ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত করেন যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, নির্বাচন ও ক্ষমতার প্রশ্নে জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবে, এবং অতীতের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারে। তিনি মনে করেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও তা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও জনগণের স্বার্থকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হওয়া উচিত।
রাজনীতিতে যোগদান বা নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সেবা করার মানসিকতা ও নৈতিক যোগ্যতাকেই রাজনীতির প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মূল্যায়ন জনগণই করে থাকে এবং সমাজ-রাষ্ট্রের কল্যাণে নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তার বক্তব্যে স্পষ্ট করা হয় যে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ধর্মীয় বিশ্বাস বা ব্যক্তিগত মতের ওপর নির্ভর না করে রাষ্ট্রীয় নীতি, জবাবদিহি ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে দলটি আশাবাদী। তার বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশ পরিচালনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তার বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ উন্নয়নের বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে।