জাতীয় ডেস্ক
দেশে নারীমুক্তি, শিক্ষা বিস্তার ও মানবাধিকার আন্দোলনের ঐতিহ্যে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অসামান্য অবদান তুলে ধরে ‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া এই উপমহাদেশের নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি ৯ ডিসেম্বর প্রদত্ত বাণীতে উল্লেখ করেন, প্রতি বছরের মতো এবারও দেশজুড়ে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হচ্ছে, যা নারী শিক্ষা ও অধিকার আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারী সমাজকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে বেগম রোকেয়ার অনবদ্য ভূমিকা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তিনি এ মহান বিপ্লবীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বেগম রোকেয়া নারীর শিক্ষাকে সমাজ পরিবর্তনের প্রধান উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী সময়ের সমাজব্যবস্থার নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন।
বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, উনবিংশ শতাব্দীর রক্ষণশীল সমাজে নারী ছিল শিক্ষা ও সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে। এই বাস্তবতায় বেগম রোকেয়া যে উপলব্ধি—শিক্ষাই নারী মুক্তির প্রধান শক্তি—উপস্থাপন করেছিলেন, তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার পথ অনুসরণ করে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
ড. ইউনূস জানান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে আছে গ্রামীণ অসচ্ছল নারীদের সহায়তায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট কর্মসূচি, দরিদ্র গর্ভবতী নারী ও স্বল্প আয়ের কর্মজীবী মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এবং প্রান্তিক নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন সহায়তা উদ্যোগ। এছাড়া কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসনের জন্য কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালনা, নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ এবং ২৪ ঘণ্টার হটলাইন সেবা ১০৯ পরিচালনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
নারীর ক্ষমতায়ন কার্যক্রমে এসব উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগত সক্ষমতা বাড়ানো অপরিহার্য। তিনি মনে করেন, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, আইনি সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নারী সমাজ আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। এ প্রক্রিয়ায় বেগম রোকেয়ার চিন্তা ও কর্ম আজও কার্যকর দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত।
বাণীতে ড. ইউনূস এও বলেন, বেগম রোকেয়ার আদর্শ অনুসরণ ও নারী অধিকার ও উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ যারা এ বছরে বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন, সরকার তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই পুরস্কার নারীর অগ্রযাত্রায় আরও উৎসাহ যোগাবে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারী উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিগুলোর সাফল্য কামনা করে বলেন, নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা অব্যাহত থাকবে। তিনি মনে করেন, সমাজের সকল স্তরে নারীর সমান অংশগ্রহণ ও সুযোগ নিশ্চিত হলে জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি আরও মজবুত হবে। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার—এই তিন স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।