জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশজুড়ে সকল ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, বিক্ষোভ ও আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত যে কোনো ধরনের অনুমোদনহীন সভা-সমাবেশ বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যারা এ সময় বেআইনিভাবে সমাবেশে অংশ নেবে বা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা যৌথভাবে কাজ করবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে সরকার আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক প্রশাসনিক প্রস্তুতিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে বাড়তি সতর্কতা জোরদার করা হবে এবং যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকার জানিয়েছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার প্রায় ৯ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এটি দেশের নির্বাচন ইতিহাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকে সর্ববৃহৎ মোতায়েন হিসেবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা ভোটকেন্দ্র ও সংলগ্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশিক্ষণে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সংঘাত এড়ানো এবং প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত দেড় বছরে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে দুই হাজারের বেশি আন্দোলন ও বিক্ষোভ দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এসব দাবি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ন্যায্য দাবির ক্ষেত্রে সংলাপ ও আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে নির্বাচনকালীন সময়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এখন সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনমুখী এই সময়ে যেকোনো দাবি বা প্রস্তাব নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করার জন্য সরকার পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কেউই এ সময়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন না বা এমন কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হবেন না যা স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করতে পারে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামো ও প্রশাসনিক সমন্বয় ইতোমধ্যে জোরদার করা হয়েছে। সরকার আশা করছে, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ জনগণ আগামী কয়েক সপ্তাহ সকল ধরনের অস্থিতিশীলতা পরিহার করে নির্বাচনের প্রতি মনোযোগ দেবেন। সরকার মনে করছে, সকল পক্ষের সহযোগিতা নিশ্চিত হলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারের বর্তমান প্রধান লক্ষ্য একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এজন্য প্রশাসন, নিরাপত্তা সংস্থা এবং নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং জনগণের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।