নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৭ জন রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০৯ জনে এবং মোট আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৪৭৭ জন।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত এক দিনের তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে দুইজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা। বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার এবং একজন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা। মৃতদের বয়স, লিঙ্গ বা চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
একই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫৫ জন রোগী।
এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৪০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৭১ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ২২ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও ডেঙ্গুর সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুম শুরু হলেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সাধারণত বর্ষা শেষে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলেও চলতি বছরে দীর্ঘ সময় ধরে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকছে। নগর ও গ্রামীণ উভয় এলাকাতেই এডিস প্রজাতির মশার বিস্তার এবং আবহাওয়ার অনুকূলতা এ পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দৈনিক ভর্তি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে, তবে মৃত্যুর ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
এর আগে ২০২৪ সালে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ। সে বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত নজরদারি, রোগী ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা অপরিহার্য। বাসাবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশে তিন দিনের বেশি জমে থাকা পরিষ্কার পানি অপসারণ, পানি জমতে পারে এমন পাত্র উল্টে রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী মশারি ব্যবহারের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে জ্বর বা ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।