রাজধানী-সংলগ্ন গাজীপুরের টঙ্গীতে ‘ডি-কোম্পানি’ নামে একটি বাহিনীর সদস্যরা ধরা পড়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ অন্য সদস্যরা। এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করা এসব অপরাধী চক্রের হাতে গত তিন বছরে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।
আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ‘গ্যাং কালচারের’ নামে টঙ্গীতে এক শ্রেণির কিশোর বা উঠতি বয়সীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। শুরুতে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, পার্টি করা বা রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার মতো অপরাধে যুক্ত থাকলেও পরে তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এমন প্রায় ৩০টি বাহিনীর সন্ধান পাওয়া যায়। এসব বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ভীতি প্রদর্শন, লোকজনকে মারধর, হয়রানি বা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ খুনোখুনিতে জড়িত ছিলেন।
২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় টঙ্গীর মিরাশপাড়া এলাকায় দা, ছোরা, চাপাতি নিয়ে মহড়া দেন ২০ থেকে ২৫ জন কিশোরের একটি দল। ওই দিন তাঁদের ছুরিকাঘাতে মারা যান হাবিবুর রহমান নামের একজন।
এরপর ২০১৯ সালের ৭ জুলাই রাতে পাগাড় ফকির মার্কেট এলাকায় একটি কিশোর দলের ছুরিকাঘাতে খুন হয় স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. শুভ (১৫)।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পাগাড় আলেরটেক এলাকায় ঠিক একইভাবে আরেকটি কিশোর দলের ছুরিকাঘাতে খুন হন মিলন নামের এক পোশাকশ্রমিক। সর্বশেষ ১ জুন টঙ্গীর ভূঁইয়াপাড়া এলাকায় ফুচকার দোকানে বসা নিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে মারধর করা হয়।
এরপর গত শনিবার আলোচিত বাহিনী ‘ডিয়ারিং কোম্পানি বা ডি-কোম্পানির’ ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। লন্ডনফেরত দুই ভাই রাজীব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পী ও সজীব চৌধুরী ওরফে পাপ্পুর হাত ধরে কয়েক বছর আগে গড়ে ওঠে এই অপরাধী চক্র। সজীব কয়েক মাস ধরে কারাগারে আছেন। রাজীব ও তাঁর ১১ সহযোগীর বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার টঙ্গী পূর্ব থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেছে র্যাব।
মামলায় বলা হয়েছে, রাজীবের বাসা থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, চারটি গুলি, দুটি ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা বলেছেন, টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার জন্য তাঁরা ‘ডি-কোম্পানি’ গড়ে তুলেছিলেন।
আদালত এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজীবের তিন দিন এবং বাকিদের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাবেদ মাসুদ জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টঙ্গীর নদীবন্দর, মিরাশপাড়া, বউবাজার ও ভূঁইয়াপাড়ার বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত চলছিল। ‘ডি-কোম্পানির’ সদস্যরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অন্যদের আর এলাকায় দেখা যায়নি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. ইলতুৎ মিশ প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদেরই কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাঁদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।