1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
করমুক্ত আয়সীমা হতে পারে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাচারের অর্থ ফেরাতে বড় বাধা ‘লেয়ারিং’ তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে মাঠে বিএনপি ঢাকা-দিল্লি বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ তিন বছর CA to unveil much-expected foundation stone of Kalurghat Bridge today NBR is split to broaden tax base, improve efficiency: govt তদন্ত প্রতিবেদন জমা হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ ♦ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্ররোচনা ♦ সরাসরি হত্যার নির্দেশ ♦ শিশুদের টার্গেট করে হত্যা ♦ আহতদের চিকিৎসায় বাধা ♦ নিহতদের ময়নাতদন্তে বাধা নির্বাচনি তহবিল সংগ্রহের চাপে বাজেট জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। ২০২৫-২৬ বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পেলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করে ইসি Govt abolishes NBR, splits it into two new revenue divisions Govt. issues gazette banning activities of AL

বিশ্বময়ীর আঁচল পাতা

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১
  • ১১৩ বার দেখা হয়েছে

জাফর ওয়াজেদদূরদর্শী ছিলেন তিনি। ছিলেন প্রেরণাদায়ী। দেশ, জাতি, সমাজ, সংসার ছিল না তাঁর কাছে মিছে কলরব। ৪৫ বছরের স্বল্প জীবনে রেখে গেছেন কীর্তির স্বাক্ষর। ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি এই বাংলায় বাঙালির জীবনধারায়। ইতিহাসের পথপরিক্রমায় দিন যত গড়বে ততই তিনি স্বমহিমায় সমাসীন হতে থাকবেন জাতির প্রাগ্রসর জীবনপ্রবাহে।

শিশু বধূটি ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন স্বামীর বন্ধু, পরামর্শক, সমর্থক, সহায়ক। এবং সন্তানদের মানবিকবোধে ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করার ব্রতে ছিলেন নিবেদিত। স্বামীর অবর্তমানে পুরো সংসারকে ধরে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, দেশ ও জাতি তথা রাজনীতির সংকটময় মুহূর্তে পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সংগঠনের তিনি কেউ ছিলেন না। কিন্তু দেখা যায়, স্বামী তথা আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবন্দীকালে দ্বিধাগ্রস্ত ও সিদ্ধান্তহীনতায় যখন কেন্দ্রীয় নেতারা পথের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না, তখন তিনিই হয়ে উঠেছিলেন অনুঘটক। বাস্তবসম্মত এবং সাহসী সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি দলীয় নেতাদের চাঙা শুধু করেননি, স্বামীকে জেল থেকে মুক্ত করা এবং আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন নেপথ্য থেকে।

ছিলেন তিনি নেপথ্যচারী। বলা যায়, নিভৃতচারী, নীরবে কাজ করেছেন। এবং তা শুরু হয়েছিল শৈশব থেকেই এবং বিয়ের পরও। ৩৩ বছরের বিবাহিত জীবন। যার মধ্যে আবার স্বামী ছিলেন প্রায় ১৩ বছর জেলে। রাজনৈতিক স্বামীর বারবার জেলে যাওয়া, বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়া, মামলার পর মামলায় অভিযুক্ত হওয়া, কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়া-এসব দেখে ও জেনে তিনি কখনো ভেঙে বা মুষড়ে পড়েননি। সাহসে বুক বেঁধে তিনি সবকিছু সহ্য যেমন করেছেন, তেমনি মোকাবিলা। আর শৈশব-কৈশোরে অসুস্থ স্বামীর সেবাও করেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে স্বামী লিখেন- “রেণু কয়েকদিন আমাকে খুব সেবা করল। যদিও আমাদের বিবাহ হয়েছে ছোটবেলায়। ১৯৪২ সালে আমাদের ফুলশয্যা হয়। জ্বর একটু ভাল হল। কলকাতা যাব, পরীক্ষাও নিকটবর্তী।” বিয়ে হয়েছিল তার মাত্র তিন বছর বয়সে। কন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার বয়স যখন দশ বছর তখন তার বিয়ে হয়। আমার মায়ের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর।” আর এই সম্পর্ক অটুট ছিল মৃত্যুর পূর্ব ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত।
Bangladesh Pratidinবঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব কীভাবে মূল্যায়িত হবেন? তিনি কি কেবলই পতিপরায়ণ স্ত্রী এবং রাজনীতিক তথা জাতির পিতার সহধর্মিণী ইতিহাসের খেরো খাতায় তিনি এসবকে ছাড়িয়ে আরও দূর প্রসারিত করেছিলেন নিজেকে। ত্যাগ, তিতিক্ষা, আদর্শ, সততা, নিষ্ঠা, কর্মকুশলতায় প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে অতিক্রম করে মহীয়সীতে প্রতিভাত হয়েছেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতা-মাতাকে হারিয়েছেন। আর শৈশবেই পালিত হয়েছেন। দাদার ভাইয়ের সংসারে শাশুড়ির কাছে। স্বামী তার কৈশোরের খেলাধুলা, রাজনীতিতে আগ্রহী ছিল। সেসব নিয়ে তার কোনো ক্ষোভ নয়, ছিল প্রেরণা। স্বামী কলকাতা গেলে রাজনীতি ও পড়াশোনার কারণে সহজে বাড়ি ফিরত না। এ নিয়ে স্ত্রীর কোনো অনুযোগ শোনা যেত না। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন- “আব্বা, মা, ভাই বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেণুর ঘরে এলাম বিদায় নিতে, দেখি কিছু টাকা হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। ‘অমঙ্গল অশ্রুজল’ বোধহয় অনেক কষ্টে বন্ধ করে রেখেছে। বলল, ‘একবার কলকাতা গেলে আর আসতে চাও না। এবার কলেজ ছুটি হলেই বাড়ি এস।” এই যে অনুযোগ, এর মধ্যে কোথাও বারণ নেই, পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন তৈরিও নয়। সেই সময় থেকেই বোঝাপড়া ছিল অতীব গভীর।

সব ধরনের পরিস্থিতিই মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে শৈশব থেকেই। ঢাকায় বসবাসকালে তিনি স্বামীর রাজনৈতিক কর্ম ও বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। রাজনীতির বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হতো। তাই বঙ্গবন্ধু যখন জেলে যেতেন, সংসারের হাল ধরতে হতো তাঁকেই। পিতার ভূমিকাও পালন করেছেন একাধারে। শেখ কামাল শৈশবেই বলেছিলেন অনেক দিন পর বাবাকে দেখে, ‘হাচু আপা তোমার আব্বাকে আমি আব্বা ডাকি।’ বঙ্গবন্ধুকে যখন একাত্তরের পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের পর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়, তার আগেই পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বেরিয়েছিলেন। আশ্রয় পাওয়া সহজ হয়নি। পাকিস্তানিরা তন্ন তন্ন করে সন্ধান চালিয়ে বেগম মুজিব ও তাঁর সন্তানদের খুঁজে পায়। এবং ধানমন্ডির একটি বাড়িতে এনে বন্দী রাখে। তার আগেই শেখ কামাল ঢাকা ছেড়ে চলে যায় যুদ্ধের ময়দানে। বন্দীখানা থেকে পালিয়ে শেখ জামালও যুদ্ধে যোগ দেয়। বড় কন্যা তখন সন্তানসম্ভবা। এ অবস্থায়ও মুষড়ে যাননি, সাহসে বুক বেঁধে সবকিছুকে মোকাবিলা করেছেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা তখনো ধানমন্ডির বন্দী শিবিরে। পরে মিত্র বাহিনীর সেনারা তাঁদের মুক্ত করে।

তারপর আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতার স্ত্রী হয়ে উঠলেন তিনি, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও তিনি কিন্তু আদি অকৃত্রিম বাঙালিয়ানায় পরিবর্তন আনেননি। পাকিস্তান পর্বে তিনি প্রাদেশিক মন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনীতির কারণে সংসার জীবনে নানা সময় আঘাত এসেছে। কিন্তু বঙ্গমাতা কখনো দমে যাননি। হতাশ হননি বা মুষড়ে পড়েননি। এই যে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ফিরে গেলেন, এ নিয়ে কোনো ক্ষোভ উচ্চারণ হয়নি। বরং হাসিমুখে তা গ্রহণ করেছেন। শাড়ি, গাড়ি, বাড়ি, গহনা ইত্যাদির চাহিদা তাঁর কখনো ছিল না। এ জন্য স্বামীকে কখনো চাপ দিয়েছেন, তা নয়। স্বামীর মতোই দেশ জাতির কল্যাণ ও মঙ্গল নিয়ে তিনিও ভাবতেন।

দলের নেতা-কর্মীদের নিজ হাতে রেঁধেও খাইয়েছেন। এমনকি মওলানা ভাসানীকে রান্না করে খাবার পাঠাতেন। গ্রামের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখতেন তেমনি নেতা-কর্মী আত্মীয়-স্বজনদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াতেন। অনেক কারাবন্দী দলীয় কর্মীর পরিবারকে যেমন দেখাশোনা করেছেন, তেমনি তাদের কারামুক্ত করার জন্য উদ্যোগও নিয়েছেন। গহনাগাটি বিক্রি করে অর্থ দলীয় কাজে ব্যয় করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি স্বামীর সংগ্রামে ছিলেন প্রেরণাদায়ী। স্বামীকে শাসকদের কাছে নত না হওয়ার সাহসও জুগিয়েছেন। দৃঢ়তার সঙ্গে সবকিছু মোকাবিলা করেছেন।

বঙ্গমাতার জীবন ও কর্ম যদি পর্যালোচনায় মূল্যায়ন করা হয়, দেখা যায়, রাজনৈতিক চেতনাবোধ, মানবিকতা, কর্মকুশলতা, বিচক্ষণতা সবকিছুকে ধারণ করে আছেন। এই যে স্বামী যখন জেলে তখনো সন্তানদের গড়ে তুলেছেন সুনিপুণভাবে। সংগীত, ক্রীড়ামোদী সন্তানদের আকাক্সক্ষা পূরণে পিছপা হননি।

বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণা এবং একের পর এক বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ এবং গ্রেফতার হওয়ার সময় ছিল বাঙালির জীবনে এক উথাল-পাথাল ঘটনা। টানা জেলখাটার সময়টাতে বেগম মুজিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রনেতাদের সহযোগিতা শুধু নয়, পরামর্শও দিতেন। ডাকসুর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ এ নিয়ে লিখেছেনও। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও তাঁর সহযোগিতায় গড়ে উঠেছিল একাত্তরের আগেই।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ তিনি করেছেন, স্বামী বঙ্গবন্ধুকে আত্মজীবনী রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। অথচ নিজের জীবনকাহিনি লিপিবদ্ধ করেননি অথবা করার জন্য সময়-সুযোগ মেলেনি অধিক ব্যস্ততার কারণে হয়তো। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী রচনার জন্য স্ত্রীর অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করেছেন- “আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনী।” স্ত্রী তাঁকে কয়েকটি খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিলেন। “জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছিল। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম।” আর বাঙালি জাতি পেয়েছে এক মহামূল্যবান গ্রন্থ। যে গ্রন্থে বাঙালি পায় তার মহানায়কের উত্থানপর্ব। মহীয়সীকে দেখা গেছে, ৭ মার্চ একাত্তরে, জাতির ভাগ্য নির্ধারণের সময়কালে। ঐতিহাসিক ভাষণের পূর্বমুহূর্তে তিনি স্বামীকে বলেছিলেন, “তোমার মনে যা আছে, তাই বলবে। তোমার কথা হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। তুমি যা বলতে চাও, নিজের মন থেকে বলো।” অলি আহাদের মতো কট্টর মুজিববিরোধী ব্যক্তিও উল্লেখ করেছেন, “অনেক ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে পরামর্শদাতা হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।” বঙ্গবন্ধুর সুখ-দুঃখের সাথী ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বামীর আদর্শের আলোকে মশালও অনেকটাই বহন করেছেন। স্বামী ও সন্তানদের সাহস, মনোবল, প্রেরণা ও শক্তি জোগানোর কাজটি যেমন সুচারুরূপে করেছেন, তেমনি স্বাধিকার আর স্বাধীনতার পথে ছিলেন সহায়ক শক্তি। জীবনের সব সংকটকে মোকাবিলা করে একজন নিরহংকার, ত্যাগী, কষ্টসহিষ্ণু, নির্লোভ, দৃঢ়চেতা, প্রত্যয়ী ও অনুকরণীয় নেত্রী হিসেবে নিজস্ব সত্তাকে তুলে ধরতে পেরেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সহধর্মিণী হিসেবে। শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতা হয়ে ওঠার নেপথ্য শক্তি ছিলেন বঙ্গমাতা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাঁকেও নির্মমভাবে নিহত হতে হয় স্বামী, দেবর, তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূসহ। স্বজন হারানোর পৃথিবীতে শুধু বেঁচে রয়েছেন দুই কন্যা। বঙ্গমাতা তিনি হয়ে উঠেছেন ৪৫ বছরের জীবনের পরিক্রমায়। বাঙালি জাতির উত্থান ও বিকাশের অন্তরালে থাকা মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব চিরঞ্জীব ও ভাস্বর হয়ে থাকবেন এই বাংলাদেশে। কবির ভাষায় বলা যায়- ‘তোমাতে বিশ্বময়ীর আঁচল পাতা’।

লেখক : কবি, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও মহাপরিচালক, পিআইবি।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com