আগামী নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মাঠে নামতে নির্দেশনা
অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণই বিএনপির বড় অস্ত্র
ব্যবসায়ী ও আমলাদের নিয়ে সরকারের নেতিবাচক দিক তুলে ধরার আহ্বান
ছাত্র-গণবিস্ফোরণের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করছে বিএনপি
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি। লন্ডন থেকে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। হচ্ছে কমিটি গঠন। দুই মহানগর কমিটিতে ঘোষণ এসেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম। দেশের অন্য জেলাগুলোতেও মাঠে থাকা ব্যক্তিদের নাম আসছে। গত শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে আগামী নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মাঠে নামতে বলা হয়েছে। অস্তিত্ব ও আত্মরক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণই বিএনপির বড় অস্ত্র। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে প্রতিষ্ঠিত একটি জনবান্ধব রাজনৈতিক দল। যা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন জিয়াউর রহমান, লালনপালন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং চলমান সময়ে এগিয়ে নিচ্ছেন তারেক রহমান। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ও রাজনীতিকদের বড় একটি অংশ চাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে দূরে রেখে আরেকটি নির্বাচনী ছক তৈরি করতে— বিএনপি ভাঙতে।
জানা গেছে, গত শনিবার বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমানের নির্দেশে আগামীতে এমপি প্রার্থীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বৈঠক থেকে ৭০টি করোনা হেল্প সেন্টারে কাজ শুরু করার নির্দেশনা আসে। স্থায়ী কমিটিতে উপস্থিত থাকা একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, যারা বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য আবেদন করেছিলেন এবং প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরকে করোনা হেল্প সেন্টারের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য তারেক রহমান নির্দেশ দেন। কর্মসূচিগুলো থেকে সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানানো হয়। জনগণের কাছে পৌঁছতে করোনা ইস্যুকে অস্ত্র হিসেবে নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের কর্মযজ্ঞ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণভাবে সমালোচিত। তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। গণমাধ্যমেও করোনা মোকাবিলা নিয়ে সরকারের ভুলত্রুটি ও পদক্ষেপ ধারাবাহিক ভুল তথ্যে সংবাদও প্রচার হচ্ছে। সরকারের সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বহীনতাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য বার্তা দেয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আরো বলেন, প্রতিটি আসনে ১ থেকে ১০ জন প্রার্থী আবেদন করে থাকেন। এর মধ্যে অধিকাংশই থাকেন ব্যবসায়ী। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। টাকার বিনিময়ে গভীর রাতে পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত। মাঠের রাজনীতিবিদ জনপ্রিয় মুখের ভরাডুবি হয়। সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই মাঠের নেতাদের জনপ্রিয় মুখ খুঁজে বের করতে মাঠমুখী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। চলমান সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের কর্মযজ্ঞ তুলে ধরে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিতে বলা হয়েছে। সিনিয়র এক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমার সংবাদকে বলেন, ‘সরকার চলমান লকডাউন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিভিন্নভাবে নিয়ে যেতে চায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায়। সরকার শুধু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবসায়ী ও আমলাদের সন্তুষ্ট রাখতে চায়। এ ছাড়া অন্য শ্রেণিপেশার প্রতি সরকারের খুব একটা মনোযোগ নেই। এ বিষয়গুলো বৈঠকে বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে। বিষয়গুলোর আলোকে জনগণের জন্য বিএনপির করণীয় একটা ছক দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, টিকা, অর্থনৈতিক ক্ষতি, ধ্বংসের প্রান্তে শিক্ষাসহ নানান বিষয়ের সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটা বার্তা দেয়া হবে। সেই আলোকে মাঠপর্যায়ের এমপি প্রার্থীরা জনগণের সামনে তা তুলে ধরবেন।
সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে রাজনৈতিক ক্ষোভের জায়গাটি ছাইচাপা দিয়ে রাখছে। তবে সবার এমনকি সাধারণ মানুষেরও ধারণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে পারে। এমনকি একটি ছাত্র-গণবিস্ফোরণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে অনেকের ধারণা। তাই বিএনপিকে এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার জন্য যারা আবেদন করেছিলেন এবং প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরকে করোনা হেল্প সেন্টারের কর্মকাণ্ডের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। চলমান সময়ে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপই প্রমাণিত হয়েছে— টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ সরকার জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্য দিকে, এই গণটিকা দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে পরিণত করার উদ্দেশে দলীয় কর্মীদের সম্পৃক্ত করায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সারা দেশে এই গণটিকার নামে একটা গণতামাশা শুরু করেছে। সরকারের হাতে টিকা এসেছে এক কোটি ৬০ লাখ, অথচ ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে ২৬ কোটি টিকা। এ ছাড়া প্রথম এক সপ্তাহে এক কোটি টিকা দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এখন একদিনে ৩০ লাখ টিকা দেয়ার জায়গায় তিন দিনে দেয়ার কথা বলছে। জনগণ এই সরকারের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে উপস্থাপন করার জন্য বিএনপি অবশ্যই কাজ করে যাবে।’