সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান, সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ইলেকট্রনিক ভোটিংসহ (ই-ভোটিং) ১০টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী ১৮ অক্টোবর ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
দলের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। বৈঠকে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মতামত তুলে ধরছেন। সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে দলের পক্ষে কী কী প্রস্তাব তুলে ধরা হবে তা নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এরই মধ্যে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত কমিটি বৈঠক করে খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে। এরপর তা দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়া হবে। তার সম্মতি ও নির্দেশনা পেলে প্রস্তাব ইসিতে উপস্থাপন করা হবে। সূত্রমতে, ইসির কাছে সুনির্দিষ্ট ১০টি প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকবেন। বিদ্যমান সংবিধানেও সে কথা বলা আছে। আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোট গ্রহণ পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি চালু এবং নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা। এ ছাড়াও বাকি প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, অভিন্ন পোস্টার ও নির্বাচনী এলাকায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জনসভার আয়োজন করা। সেখানে নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী প্রতিটি দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরবেন। এ অভিন্ন সমাবেশ একাধিকবারও হতে পারে। প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট একটি ‘টোকেন মানি’ সরবরাহ, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগবিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ। নির্বাচন কমিশনের যে বাজেট দেওয়া হয় সেই বাজেট যেন তারা স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারে সে বিষয়গুলোও প্রস্তাবে থাকবে। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন। সে সময় তিনি রুটিনমাফিক কাজ করবেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সব ক্ষমতা কমিশনের ওপর থাকবে। কাজেই তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন তারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা সংলাপে বসে ই-ভোটিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানাব। তবে করতেই হবে এমন চাপ প্রয়োগ করা হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যাতে স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য আমরা প্রস্তাব করব। আমরা চাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ নির্বাচন করতে যা যা করা দরকার সেসব উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে কিছু বিধিবিধান পরিবর্তন, পরিমার্জনসহ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার প্রস্তাব দেবে। সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অনিবার্য না হলে নির্বাচনকালীন সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে থাকব। যদি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে সেনা মোতায়েন হবে, অন্যথায় নয়।