শীত এগিয়ে এলেও রাজধানীর বাজারে এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। সেইসঙ্গে কমেনি মুরগির দাম। ফলে সবজি ও মুরগির দামে ক্ষুব্ধ মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এরইমধ্যে অনেকে অভিযোগ করছেন, ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এছাড়া ভোজ্যতেলের প্রতি লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। প্যাকেট চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। তবে মুরগির দাম শুনে হতাশ হচ্ছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। মিরপুর বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা নিরাজউদ্দিন বলেন, মাসে এক-দুদিন পরিবার নিয়ে মাংস ভাত খাওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের পক্ষে তো গরু বা খাসির মাংস কেনা সম্ভব নয়। এখন ব্রয়লার মুরগিও মনে হচ্ছে কপাল থেকে উঠে যাবে। তিনি বলেন, বাজারে এসে দেখি ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। দামাদামি করে কেউ কেউ ১৮৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। এমন দাম হওয়ায় গত সপ্তাহে মুরগি না কিনে ফিরে গিয়েছিলাম।
রায়ের বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন রিকশাচালক রহিম। তিনি বলেন, অনেকদিন মাংস খাওয়া হয়নি। তাই বাজারে এসেছিলাম একটা মুরগি কিনতে। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক, তাই মুরগি না কিনে ফিরে যাচ্ছি। তিনি জানান, গরু ও খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কয়েক বছর হয়েছে। সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদে কিছু মাংস পেয়েছিলাম। এরপর আর গরুর মাংস খাওয়া হয়নি। মনে হচ্ছে মাংস আমাদের মতো গরিব মানুষের কপালে নেই।
মুরগির পাশাপাশি সবজির দামও চড়া। ব্যবসায়ীরা আগের মতোই সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর ও টমেটো। মান ভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এই দুই সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সবজি। শীতের আগাম সবজি শিম গত সপ্তাহের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে খুব একটা হেরফের হয়নি।
এছাড়া চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, পটোল, করলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলাশাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাক, কলমিশাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
মোহাম্মদপুর বাজারে সবজি কিনতে আসা হাফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে কোনো কিছুতে এখন স্বস্তি নেই। সবকিছুর দাম চড়া। তবে মহল্লার বাজারের তুলনায় এখানে কম দামে সবজি পাওয়া যায়। তাই একটু কষ্ট করে এখানেই সবজি কিনতে আসি।
তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করে এমন দাম বাড়াচ্ছে। পেঁয়াজের দামের উঠা-নামা বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা হয়েছিল। সরকার শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতেই এখন ৬০ টাকা কেজি হয়েছে। এটা কি ভাবে স্বাভাবিক হতে পারে। আসলে বাজারে কারো কোনো নজরদারি নেই, যার সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গত সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা কমে পেঁয়াজের কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় নেমে আসে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে আরো ৫ টাকা কমে এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে পেঁয়াজের অভাব নেই। কিন্তু ভারত থেকে পেঁয়াজ কম আসায় হুট করে দাম বেড়েছিল। তবে সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করায় দাম কিছুটা কমেছে।