1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
করমুক্ত আয়সীমা হতে পারে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাচারের অর্থ ফেরাতে বড় বাধা ‘লেয়ারিং’ তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে মাঠে বিএনপি ঢাকা-দিল্লি বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ তিন বছর CA to unveil much-expected foundation stone of Kalurghat Bridge today NBR is split to broaden tax base, improve efficiency: govt তদন্ত প্রতিবেদন জমা হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ ♦ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্ররোচনা ♦ সরাসরি হত্যার নির্দেশ ♦ শিশুদের টার্গেট করে হত্যা ♦ আহতদের চিকিৎসায় বাধা ♦ নিহতদের ময়নাতদন্তে বাধা নির্বাচনি তহবিল সংগ্রহের চাপে বাজেট জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। ২০২৫-২৬ বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পেলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করে ইসি Govt abolishes NBR, splits it into two new revenue divisions Govt. issues gazette banning activities of AL

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু

রিপোর্টার
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১০০ বার দেখা হয়েছে

রাজু আহমদ

বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন ছিলেন বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে আপসহীন। ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধু কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারে অবস্থান করেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে উচ্চকণ্ঠ থেকে আন্দোলন বেগবান করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং তার সঙ্গে কারাগারে বন্দি মহিউদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন, যা ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর এসব দাবির প্রতি সমর্থন পোষণ করে এ বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ অবস্থায় শাসকগোষ্ঠী ১৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন আহমদকে অনশনরত অবস্থায় ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করে। এভাবেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সচেষ্ট থেকেছেন।

 

১৯৫২ সালে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু দুটি কারণে ঐ সম্মেলনে বাংলায় বক্তৃতা করেন। প্রথমত, চীনের অনেক প্রতিনিধি ইংরেজি জানা সত্ত্বেও মাতৃভাষায় বক্তৃতা করেন এবং দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কিছুদিন আগে পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষার জন্য যে আন্দোলন হয়েছে, তা অন্য দেশের প্রতিনিধিদের কাছে আরো একবার তুলে ধরা। এভাবে ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন পরেই বঙ্গবন্ধু দেশের বাইরে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।

বাংলা ভাষার উৎকর্ষ ও বহুমাত্রিকতা বিকাশে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলা একাডেমি। বর্তমানে বাংলা একাডেমি একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অনেকের অজানা, পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষার বিকাশে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী। মূলত ঐ সময় বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলায় বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় রাজি হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমি প্রথম যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন করে, সেটিও বঙ্গবন্ধুর উত্সাহ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়।

৫ জুন ১৯৫৫ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ সময় অবাঙালি পাকিস্তানি শাসকেরা পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখতে সচেষ্ট হয়। অথচ ‘বাংলা’ শব্দটার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য। বঙ্গবন্ধু এ সময় এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস যখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, যখন মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর আয়োজন চলছিল, তখন বঙ্গবন্ধু বলেই শত্রুর সামনে বলতে পেরেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা’।

১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু জনগণের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখেন। এদিকে ১৯৭২ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু সরকার জারি করে ‘দ্য বাংলা একাডেমি অর্ডার, ১৯৭২’। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলা একাডেমির কলেবর বাড়ান, বাংলা ভাষার উৎকর্ষ ও শ্রীবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রবর্তিত সেই সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানের ১৫৩(৩) অনুচ্ছেদে এ-ও বলা হয়, এই সংবিধান পাঠের ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। এভাবে সংবিধানে মাতৃভাষা বাংলার শ্রেষ্ঠত্ব রাখা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু এ সময় আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেন বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য বিকাশে। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভারত থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ও পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েন এবং তা নিয়ে উপমহাদেশের রাজনীতির নানা মেরুকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সনকে অবহিত করেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধু এই বিশেষ বার্তা মার্কিন প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন চিঠির মাধ্যমে। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, বিশেষ দূতের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিটি ছিল বাংলায় লেখা।

বাংলা ভাষার মর্যাদা বিকাশে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা করেন। বাংলা ভাষার সম্মান প্রতিষ্ঠায় এমন ঘটনা তখন পর্যন্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। এর আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বিশ্বমঞ্চে বাংলা ভাষাকে পরিচিত করে তোলেন। যদিও তিনি নোবেল পেয়েছিলেন ‘গীতবিতান’-এর ইংরেজি অনুবাদের ওপর। কবিগুরু তার নোবেল বক্তৃতাটি বাংলায় করলে সেটি হতো বাংলা ভাষার জন্য অহংকারের, কিন্তু তিনি তা করেছিলেন ইংরেজিতে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভের পর দুনিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মশালায় যে বক্তৃতা করে বেড়িয়েছেন, তা-ও সব ইংরেজিতে। এখানে বঙ্গবন্ধু অনন্য।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেসকো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়ে এটি বর্তমানে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কারাগারের বন্দি দিনগুলোতে বাংলা ভাষায় লেখা তার ডাইরিগুলো এখন পর্যন্ত তিন তিনটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের এক অনন্য দলিলে পরিণত হয়েছে। বই তিনটি হলো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’। বর্তমানে বইগুলো বিশ্বের বহু ভাষায় অনূদিত হচ্ছে, যা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আরো গভীরভাবে পৌঁছে দেবে বিশ্ববাসীর কাছে।

লেখক : ফেলো, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধানমন্ডি, ঢাকা

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com