ঢাকা, ৬ অক্টোবর, ২০১৮: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে জাতি গঠন মূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিতে তরুণদের, বিশেষ করে সদ্য গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা শুধুমাত্র আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ হয়েছে, কিন্তু দেশ গড়ার সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। ক্ষুধা ও নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়া না হওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামীতে তোমারাই দেশ পরিচালনা করবে। তোমাদের সঠিক নেতৃত্বে দেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ। জীবনে চলার পথে তোমাদের আদর্শ থাকতে হবে। সে আদর্শ হবে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। তোমরা কখনো সত্যের সাথে মিথ্যার, ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের আপোষ করবে না।
রাষ্ট্রপতি ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতির সাথে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির তুলনা করে বলেন, ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণ আর্দশভিত্তিক। সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠির স্বার্থ মূখ্য ছিল না।
রাষ্ট্রপতি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করে এই নির্বাচন কেউ যাতে ভন্ডুল করতে না পারে, এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে রাজনীতিতে সবোর্চ্চ পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান। বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদ বলেন, কেবলমাত্র বাল্যকালের পর থেকে যারা রাজনীতি করে আসছে, তারাই কেবল এই রাজনীতি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের উল্লেখ করে ডিপ্লোমার নামে ডিক্রি দেয়া যায় কিনা এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ও ঐতিহ্য ব্যাহত হয় কিনা, সে বিষয়টি ভেবে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ছাত্রদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিষয়কে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবির্ক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতির প্রত্যাশা পূরণে সর্বদাই একজন চালকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সময়ের চাহিদা এবং বৈশ্বিক জনশক্তির বাজারের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন বিভাগ সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সমাবর্তন বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন। সমাবর্তনে মোট ২১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন এবং এদের মধ্যে ৭২ জন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যগণ জাতীয় অধ্যাপকগণ, ঢাবি সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্যগণ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাবি সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়।