প্রথমেই আপনার জীবনের ব্যক্তিগত পটভূমিটা সামান্য জেনে নিই।
দীপেশ চক্রবর্তী: আমার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর। কলকাতার মেডিকেল কলেজে। আমার বাবা-মা দুজনই পূর্ববঙ্গের। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী এলাকার। তবে বাবাদের পরিবার হচ্ছে সে রকম বাঙাল, যারা আগে থেকেই কলকাতায় এসে চাকরিবাকরি করে, ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যায়। তাঁর গ্রামের নাম ছিল ফুরশাইল। দুই পরিবারই বজ্রযোগিনী অঞ্চলের ব্রাহ্মণ এটাই জানি। মায়েরাও তা–ই। বাবারা বংশসূত্রে পণ্ডিত, পুরোহিত, মাস্টার ইত্যাদি। মায়েদের পরিবার যদিও ব্রাহ্মণ ছিল, আমার নানা ছিলেন পাটের আড়তদার। সে সূত্রে মারোয়াড়ি আর সাহেব পাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার পাশেই মায়ের বেড়ে ওঠা। ১৯৪৬ সালে তাঁরা কলকাতায় চলে এলেন। আমার মা তখন তাঁর মামাবাড়ি ফরিদপুরে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। সেখানে তাঁর মামা অবনীমোহন চক্রবর্তী ছিলেন রাজেন্দ্র কলেজের নামী প্রিন্সিপাল। কলকাতায় আসার পর মা বাংলায় এমএ করেন। এখানে তিনি ছিলেন সলিল চৌধুরীর সহপাঠী। মা ছিলেন বিএ ক্লাসের একমাত্র মেয়ে। তাঁর কাছ থেকে অনেক মজার গল্প শুনে আমি বড় হয়েছি।
দেশত্যাগী বাঙাল দম্পতির সন্তান হিসেবে আপনার বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দীপেশ: ছেলেবেলায় আমাদের বাঙাল থেকে ঘটি হওয়ার প্রচেষ্টা ছিল। যেমন আমরা ‘ড়’ আর ‘র’–এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারতাম না। চন্দ্রবিন্দুর কারণে অনুনাসিক ধ্বনির উচ্চারণ আমাদের আসত না। কবিতা ‘আ–বৃত্তি’ করে নাকি ‘আব্বৃত্তি’ করে, তা ঠিকমতো বুঝতাম না। ‘আমার বনে বনে ধরল মুকুল,/ বহে মনে মনে দক্ষিণহাওয়া’ হবে, নাকি ‘আমার বোনে বোনে ধরল মুকুল, বহে মোনে মোনে দক্ষিণহাওয়া’ উচ্চারণ করতে হবে, এগুলো শিখতে হয়েছে। আমাদের বাঙাল বাড়িতে যাঁরা এগুলো শেখাতেন, তাঁরা একটু–আধটু অত্যাচার করতেন। আমার এক জ্যাঠামশাই বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার ছিলেন। তিনি ছিলেন গণিতের শিক্ষক। সেখানে গিয়ে আমি এভাবে গাইলে চাচাতো বোনেরা বলত, উচ্চারণ ভুল হচ্ছে। যিনি আমাদের গান শেখাতেন, তিনিও তো বাঙাল। তাকেও এ বিষয়গুলো শিখতে হয়েছে। বাঙালদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথও ঠাট্টা করতেন। ছিন্নপত্র–এ তিনি লিখেছেন, ‘ঘোড়ার’ কথাকে বাঙালরা বলে ‘গোরা’র কথা। বাঙাল অ-সভ্য, তাকে সভ্য করতে হবে। ঠাট্টা হলেও ছোটবেলায় এটা আমাদের শুনতে হয়েছে।বিস্তারিত