1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

যেকোনো মুহুর্তে গ্রেপ্তার স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া মিঠু!

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৯ বার দেখা হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সবচে বড় দুর্নীতিবাজ মাফিয়া হিসাবে মনে করা হয় মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে। দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকলেও সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা জালে আটক এই মিঠুকে যেকোনো মুহুর্তে গ্রেপ্তার করা হতে পারে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

মিঠু স্বাস্থ্য খাতে আলোচিত দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি তার শত কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ হয়েছে। এই সম্পদ জব্দের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই বাংলাদেশেও তার ৭৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ হয়েছে। মিঠু স্থায়ীভাবে বসবাস করেন অস্ট্রেলিয়ায়। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে এসেই তিনি ফেঁসে গেছেন।

পুরো স্বাস্থ্যখাতে বিস্তৃত মিঠুর জাল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিএমএসডি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ওষুধ প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নার্সিং অধিদফতর, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে আছে মিঠুর এজেন্ট। তারা মিঠুর হয়ে কাজ করে। স্বাস্থ্যখাতে মিঠু মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচরার মহিপুর ইউনিয়নে। মিঠু বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন। বিদেশে থাকলেও তার ইঙ্গিতেই চলে স্বাস্থ্যখাত। বিদেশেও রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।

দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ন্ত্রণে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব খাটান। কখনো তা অর্থের মাধ্যমে, আবার কখনো হুমকি-ধামকির মাধ্যমে। মিঠুর সিন্ডিকেটের মর্জিমতো কাজ না করে উপায় নেই— বলছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। কারণ, এই সিন্ডিকেটের লুটপাটসহ নানা রকমের অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে অনেক উচ্চ পর্যায়ের যোগসাজশ রয়েছে। টেন্ডার কারসাজিতে পটু এই সিন্ডিকেট। এক্ষেত্রে সরকারি সিনিয়র পর্যায়ের ডাক্তার, প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও বাইরের কিছু দালাল ব্যবহার করে। এরা সরকারি যে হাসপাতাল বা যে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে সেই হাসপাতালের প্রধান ব্যক্তির সঙ্গে আগেই বোঝাপড়া করে নেয়। টেন্ডার যেভাবেই আহ্বান করা হোক না কেন, যে বা যারাই টেন্ডারে অংশ নিক না কেন কাজ তাদেরই দিতে হবে।

জানা গেছে, ওই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন না থাকলেও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চাহিদা তৈরি করা হয়। যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তারাই এনে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এরপরেই শুরু হয় টেন্ডার কারসাজি। টেন্ডার ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয় টেন্ডার সিডিউল তৈরি করার সময়ই। সিন্ডিকেটের বিশেষ প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ যাতে টেন্ডারে অংশ নিতে না পারে সেভাবেই ‘স্পেসিফিকেশন’ তৈরি করা হয়। সিন্ডিকেটের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কেউ টেন্ডারে অংশ নিলেও সেগুলোকে নানা অজুহাতে ‘নন-রেসপন্সিভ’ করা হয়। এভাবেই কমমূল্যের যন্ত্রপাতি বেশি মূল্যে বা অস্বাভাবিক মূল্যে সরবরাহের কার্যাদেশ আদায় করে নেয় সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু, তাতেও এরা ক্ষান্ত হয় না। এক দেশের তৈরিকৃত মালামাল সরবরাহের কথা বলে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আরেক দেশের তৈরি করা কম মূল্যের ও নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে থাকে। দেখা যায়, ইউরোপ-আমেরিকার মালামালের কথা বলে চীন বা ভারতের মালামাল সরবরাহ করা হয়। যেহেতু সর্বত্রই সিন্ডিকেটের লোকজন নিয়োজিত থাকে তাই এসব জাল-জালিয়াতি কোথাও বাধা পায় না। আর এভাবেই হাতিয়ে নেয়া হয় সরকারের কোটি কোটি টাকা।

মিঠু সিন্ডিকেট গঠিত হয় ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন। হাওয়া ভবনের দালাল ছিলেন মিঠু। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে মিঠু সিন্ডিকেট আরো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এই বহুল আলোচিত মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর হঠাত্ অস্বাভাবিক উত্থান ঘটে স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই। অনেক মন্ত্রী-সচিব মিঠুর ‘বিজনেস পার্টনার’ হিসেবে পরিচিত।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রীপদে বসেই যে কোনো ধরনের সিন্ডিকেটকে এড়িয়ে চলার ঘোষণা দেন। এ সময় কিছুটা বেকায়দায় পড়েন মিঠু। মিঠু একজনকে তিন কোটি টাকার গাড়ি দিলেও তিনি সেই গাড়ি নেননি। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মিঠু মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফেলেন। কর্মকর্তাদের আর্শীবাদে পুরো স্বাস্থ্যখাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে আবির্ভূত হন মিঠু। ওই সময় মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বদলি হয়ে আসলে তাকেও ম্যানেজ করে ফেলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিন জন পরিচালক মিঠু সিন্ডিকেটের সদস্য। এরা মিঠুকে শত শত কোটি টাকা লুটপাটে সহযোগিতা করেন। তাদের একজন অবসরে চলে গেছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তাকে গাড়ি-বাড়িও করে দেন তিনি।

 

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন মিঠু সহ প্রায় এক হাজার ব্যক্তির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তাদের ব্যাপারে তদন্ত করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের কারণেই তার স্থাবর অস্থাবর সহ প্রায় ৭৪ কোটি টাকার মূল্যের সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মসিউর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি-তে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। মহানগরের সিনিয়র দায়রা জর্জের অনুমতি সাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মিঠু স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজদের একজন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মিঠু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করেন এবং এর পরপরই তিনি স্বাস্থ্য খাতে একছত্র রাজত্ব তৈরি করেন। টেন্ডার সিন্ডিকেট এবং যন্ত্রপাতি না দিয়ে বিল উত্তোলন করা সহ নানা রকম অভিযোগ মিঠুর বিরুদ্ধে আছে। এর আগে মিঠুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছিল কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত থেকে তিনি রেহাই পেয়ে যান। এখন নতুন করে মিঠুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তা তদন্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। উল্লেখ্য, কদিন আগে মিঠুর নিউ ইয়র্কে একটি বাড়ি, একটি মোটেল সহ একাধিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই বাজেয়াপ্তের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে আশ্রয় নিয়েছেন। মিঠুর অস্ট্রেলিয়াতেও বিপুল সম্পদ রয়েছে। এই মাসের প্রথম দিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।

সূত্রগুলো বলছে যে, বাংলাদেশে আসার তার প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশে তার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়া। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার সমস্ত সম্পত্তি জব্দের পর তিনি ধারণা করেছিলেন যে, বাংলাদেশেও তিনি বিপদে পড়তে পারেন। আর এই কারণেই দেশে এসে সমস্ত সম্পদ বিক্রির পায়তারা করেন। মিঠুর দেশে আসার খবরের সাথে সাথেই গোয়েন্দারা মিঠুকে অনুসরণ করা শুরু করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আর এর ফলেই এখন গোয়েন্দার জালে ফেঁসে গেছেন।

বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মিঠু এখন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার বাসায় রয়েছেন এবং তিনি যে কোন উপায়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করতে পারেন। তবে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মিঠু এখন গোয়েন্দা জালেই আছে এবং যেকোনো মুহূর্তে মিঠুর গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com