অনলাইন ডেস্ক
দুই বছরের বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেল শ্রীলঙ্কা। ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফার ভোট গণনা শেষে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বামপন্থী রাজনীতিবিদ অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে দেশটির নির্বাচন কমিশন এ তথ্য জানায়।
কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা হিসেবে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দিশানায়েকে ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে।
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে, শপথ নেবেন কালশ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে, শপথ নেবেন কাল
এতসব আলোচনার মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে কে এই অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে? তার পুরো নাম দিশানায়েকে মুদিয়ানসেলাগে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে অনুরাধাপুরা জেলার থাম্বুতেগামা গ্রামে ১৯৬৮ সালের ২৪ নভেম্বর এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে দিশানায়েকের জন্ম। বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর ও মা গৃহিণী।
প্রাথমিক জীবন ও ছাত্ররাজনীতি
দিশানায়েকে থাম্বুথেগামা গামিনি মহাবিদ্যালয় ও থাম্বুথেগামা সেন্ট্রাল কলেজে পড়াশোনা করেন। কলেজে পড়াকালীন সময়েই দিশানায়েকে ছাত্ররাজনীতিতে অংশ নেন। তিনি ১৯৮৭ থেকে ৮৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জয়াবর্ধনে এবং আর প্রেমাদাসার ‘সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী’ শাসনের বিরুদ্ধে জেভিপির সশস্ত্র বিদ্রোহে যোগ দেন। পরে তিনি পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং হুমকির কারণে কয়েক মাস পর সেখান থেকে চলে যান। এক বছর পর ১৯৯২ সালে কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ৯৫’ সালে শারীরিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘অদ্ভুত’ নিয়মশ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘অদ্ভুত’ নিয়ম
মূলধারার রাজনীতি অংশগ্রহণ
মার্কসবাদী এ নেতা ১৯৯৫ সালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র সমিতির জাতীয় সংগঠক এবং পরে জেভিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নিযুক্ত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি জেভিপির পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। ২০০০ সালে শ্রীলঙ্কার সংসদ নির্বাচনে তিনি জেভিপির জাতীয় তালিকা থেকে সংসদে যান এবং ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন।
২০০৪ সালে জেভিপি শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) সঙ্গে জোট বেঁধেছিল। সে সময় তার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদে ৩৯টি আসনে জয়লাভ করে। দিশানায়েকে তখন কুরুনেগালা জেলা থেকে নির্বাচিত হয়ে এসএলএফপি-জেভিপি সরকারের কৃষি, পশুসম্পদ, ভূমি ও সেচ মন্ত্রী হন। পরবর্তীতে সুনামির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর ও পূর্ব প্রদেশগুলোতে ত্রাণ সমন্বয়ের জন্য এলটিটিইর সাথে রাষ্ট্রপতি কুমারানাতুঙ্গা সরকারের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এরই অংশ হিসেবে জেভিপি নেতা আমেরাসিংহের ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় দিশানায়েকে অন্যান্য জেভিপি মন্ত্রীদের সঙ্গে ২০০৫ সালের ১৬ জুন পদত্যাগ করেন। এছাড়া তিনি সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ভারতীয় আমেরিকানদের প্রভাবযুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ভারতীয় আমেরিকানদের প্রভাব
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী
একটি নির্বাচনী প্রচারণায় ভাষণ দিতে গিয়ে দিশানায়েকে সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে না বলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আশ্বস্ত করেন। এই অনুচ্ছেদ বৌদ্ধধর্মকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। জেভিপি নেতৃত্বাধীন জোট এনপিপিও আর্টিকেল ৯ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারতবিরোধী অবস্থান
দিশানায়েকের জেভিপি ভারত থেকে আসা তামিল বংশোদ্ভূত এস্টেট শ্রমিকদের ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের হাতিয়ার’ বলে নিন্দা করেছিল। দলটি বাণিজ্য সম্পর্কিত বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিরও (সিইপিএ) বিরোধিতা করেছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বৃহত্তর বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। কাচাথিভু দ্বীপকে ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টারও বিরোধিতা করেছেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। উল্লেখ্য, নয়াদিল্লি এই বছরের শুরুতে দিশানায়েকে এবং জেভিপি প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে।
মোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গমোদি-বাইডেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
তামিলদের বিরুদ্ধে অবস্থান
দিশানায়েকের জেভিপি তামিলদের কাছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিরোধিতা করেছে। তার দল ১৯৮৭ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্বাক্ষরিত ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির বিরোধিতা করেছিল। দলটি শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীরও বিরোধিতা করেছে, যা দেশের তামিল-অধ্যুষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভূমি রাজস্ব এবং পুলিশের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার জন্য প্রাদেশিক কাউন্সিল তৈরি করেছিল।
সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন
এলটিটিই এবং এর নেতা প্রভাকরণের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে জেভিপি সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন দেয়। তামিল গার্ডিয়ান অনুসারে, এলটিটিই ও শ্রীলঙ্কা সরকারের মধ্যে ২০০২ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ‘দ্বীপে একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি’ হিসাবে দিশানায়েকে অভিহিত করেছিলেন।
জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলাসহ তিন বিষয়ে গুরুত্ব বিশ্বনেতাদেরজলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলাসহ তিন বিষয়ে গুরুত্ব বিশ্বনেতাদের
আইএমএফের বেইলআউট নিয়ে মতবিরোধ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে শ্রীলঙ্কায় ৩০০ কোটি ডলারের বেইলআউট প্যাকেজ থেকে ৩ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পরবর্তী অংশ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। দিশানায়েকে বারবার বলেছেন, তার দল চুক্তির শর্তাবলী ‘পুনরায় আলোচনা’র চেষ্টা করবে।