1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
যুক্তরাষ্ট্রে নাসিমপুত্র তমালের ১৪টি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় একদিনে ভূমিকম্পে কাঁপলো ৬ দেশ মায়ানমারে ভূমিকম্পে অন্তত ১৪৪ জন নিহত নতুন পথে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য ► এ বছরই শুরু হবে ইকোনমিক জোনের কাজ ► সেবা খাতে নতুন বিনিয়োগে নজর ► সেমি কন্ডাক্টর, সৌর প্যানেলে ই-কমার্স শিল্পে আসতে পারে জায়ান্ট কোম্পানি অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে অনেক পোশাক কারখানা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ কয়েকটি জেলার অন্তত ৪৩ তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের বেতন ও ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। Modi’s Bangkok itinerary excludes meeting with Dr. Yunus Bid’ah or Riverine Islam? DU to hold first-ever Eid rally amid allegations of animal abuse, cyber attack Bangladesh secures commitment of $2.1 billion in investments, loans and grants from China দেশের ৭ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ

গানের জন্য স্কুলও ছাড়তে হয়েছিল হেমন্তকে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১২৪ বার দেখা হয়েছে

সৌমেন্দ্র গোস্বামী ঢাকা

 

স্কুলে কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গান গাইছিল। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তিন মাস পর মাধ্যমিক পরীক্ষা যাদের, তাদের এমন কর্মকাণ্ড শ্রেণিকক্ষের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভালো লাগল না। ক্লাসে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কারা গান করছিল?’ কথা বলল না কেউ। অগত্যা এগিয়ে গেল একটি ছেলে। বলল, ‘আমি, স্যার!’ স্যার তাকে অফিসে আসতে বললেন। ঘটল কল্পনাতীত ঘটনা। রেজিস্ট্রার খাতা থেকে নাম কেটে দিয়ে স্যার বললেন, ‘যাও, এবার গান গেয়ে বেড়াও! স্কুল থেকে তোমায় তাড়িয়ে দেওয়া হলো।’ স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সেই ছেলে আর কেউ নন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আজ গুণী এই শিল্পীর চলে যাওয়ার দিন। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যু হয় তাঁর। হেমন্তের প্রয়াণদিবস উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা কথা।

ছেড়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংও
গান গাওয়ার জন্য স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলেও পরে অবশ্য বাবার অনুরোধে স্কুলে আবার ফিরতে পেরেছিলেন হেমন্ত। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনও পেয়েছিলেন।
অভাবের সংসার। বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলে পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হবে, তাঁর মতো টানাটানির জীবন যেন না হয়। তা ছাড়া হেমন্ত মেধাবী, লেখাপড়ায় ভালো। বাবা কালিদাস মুখোপাধ্যায় চেষ্টাও করেছিলেন সাধ্যমতো। পৈতৃক ভিটা ছেড়ে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন ভবানীপুরের ২৬/২–এ রূপনারায়ণ নন্দন লেনে। চাকরি করতেন ম্যাকনিন ম্যাকেনজির সাধারণ একটি পদে। নামেমাত্র বেতন ছিল। সংসারের উপশমে পাশাপাশি টিউশনিও করতেন। কিন্তু সামান্য উপার্জন দিয়ে মিত্র ইনস্টিটিউশনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়ানোর ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তারপরও পড়ালেখায় হেমন্তর পারঙ্গমতার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে অর্ধেক বেতনে কোনোক্রমে ভর্তি করেছিলেন। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে বাবার মানও রেখেছিলেন হেমন্ত। পরে বাবার কথামতো ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। কিন্তু গান তত দিনে পেয়ে বসেছে তাঁকে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
শচীনকর্তা, পঙ্কজ মল্লিকের গান বাজতে শুনলেই মন কেমন করে ওঠে। পাশাপাশি সুরের প্রতি মোহও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ফলে যা হওয়ার, তা–ই। পড়ালেখার হাল ছেড়ে দিলেন হেমন্ত। ঘোষণা দিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়েছিলেন ১৯৩৮ সালে। অবশ্য তত দিনে প্রথম রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়েছে।

বিদগ্ধ যন্ত্রণার দিন
কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না, বাড়িতে গানের জন্য বাদ্যযন্ত্রের জোগান ছিল অপ্রতুল। কলকাতায় আসার পর আসান হলো কিছুটা। বন্ধু শ্যামসুন্দরের বাড়িতে হারমোনিয়াম, তবলা, গ্রামোফোন রেকর্ড ইত্যাদি ছিল। বন্ধুর সঙ্গে একদিন যাওয়ার পরই নেশা হয়ে যায় হেমন্তর। নিয়মিত শ্যামের বাড়িতে যাওয়া–আসা শুরু করেন। কোনো গান ভালো লাগলেই শুনে আত্মস্থ করে শ্যামসুন্দরের বাড়িতে গিয়ে হারমোনিয়োমে তুলতেন। শ্যামের বাড়ির লোকজনও স্নেহ করতেন হেমন্তকে। গান গাওয়ার বাসনা কিছুটা মিটল। কিন্তু মঞ্চ কোথায়? কোথায় বিমুগ্ধ শ্রোতাসকল?

স্কুলের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার বাসনা। কিন্তু সুযোগ মেলে না। ধনী লোকেদের স্কুলে অনুরোধ করে, অর্ধেক বেতনে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর মতো সাধারণ ছেলেকে স্কুলের অনুষ্ঠানে কে-ই বা গান গাওয়ার সুযোগ করে দেবেন! বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়। হ্যাঁ, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই হেমন্তর স্কুলের বন্ধু। এসব দেখে বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন ছিল, স্কুলের অনুষ্ঠানে এত মানুষ গান গায়, হেমন্ত কেন সুযোগ পাবে না? তাই নিজেই হেমন্তর গান গাওয়ার ব্যবস্থা করে এসে বলেছিলেন, ‘তোকে আর স্কুলের অনুষ্ঠানে গাইতে হবে না। ওরা ভালো গায়কদের নিয়ে অনুষ্ঠান করুক। তুই চল আমার সঙ্গে রেডিও স্টেশনে। অডিশনের ব্যবস্থা পাকা করে এসেছি।’

গান গাওয়ার জন্য রেকর্ড কোম্পানির দরজায় দরজায়ও ঘুরতে হয়েছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে। জলসায় গান গাইবেন, চার ঘণ্টা ধরে বসে আছেন। শেষে গিয়ে শুনতে হয়েছে, ‘দুর মশাই, আপনার গান কে শুনবে?’ তারপর গানের জগতে পরিচিত হয়ে ওঠার অনেক দিন পরও অর্থের প্রয়োজনে গানের টিউশনি ছাড়তে পারেননি। গ্রামোফোন কোম্পানির মহড়াকক্ষে গানের ক্লাসও নিতেন তিনি। বলতেন, ‘টিউশনি না করলে খাব কী?’
এতশত কষ্ট মুখ বুজে সয়ে গেছেন কেবল গানের জন্য, গানকে ভালোবেসে।

বাবার প্রেরণা
ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে গান গেয়ে বেড়াবে, মেনে নিতে পারছিলেন না বাবা কালীদাস মুখোপাধ্যায়। তাই রেডিওতে গান গাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘রেডিওতে গান গাওয়া হবে না। পড়াশোনা করো মন দিয়ে।’
বাবার নিষেধাজ্ঞায় মন খারাপ হেমন্তর। সব খুলে বললেন বন্ধু সুভাষকে। কেউই বিষয়টা মেনে নিতে পারলেন না। একটাই কথা সবার, রেডিওতে হেমন্তকে গান গাইতেই হবে। প্রয়োজনে বাবাকে সবাই মিলে বোঝাবেন। মা দায়িত্ব নিলেন। বুঝিয়ে বলার পর নরম হলেন বাবা। সম্মতি দিলেন হেমন্তকে রেডিওতে গান গাওয়ার।

হতে চেয়েছিলেন সাহিত্যিক
হেমন্তর লেখার হাতও ছিল চমৎকার। গল্প লিখতেন। গান করবেন; অপেক্ষা কেবল আশানুরূপ সুযোগের। হতাশা ও কষ্টের আঘাতে আঘাতে হৃদয়ের পলেস্তারা রক্তাক্ত হলেও হাল ছাড়েন না হেমন্ত। সংগীতচর্চা চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি লেখালেখিতেও মনোযোগ দেন। সবকিছুতেই সঙ্গী বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি লিখতেন কবিতা। আর হেমন্ত লিখতেন গল্প। দুচোখে সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্নও ছিল হেমন্তর। তাঁর কয়েকটি লেখা প্রকাশিতও হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছাপা হয়েছিল ‘দেশ’ পত্রিকায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায় বন্ধুর সাফল্যে খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু গানে অনবদ্য হেমন্ত, বন্ধুর কণ্ঠে মুগ্ধ সুভাষ। গান থেকে বন্ধুর মনোযোগ যেন সরে না যায়, তাই বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘সাহিত্য নিয়ে তো খুব মাতামাতি হচ্ছে, কিন্তু গান ছাড়লে চলবে না। রেডিওতে গান হয়েছে, এবার রেকর্ডের চেষ্টা করতে হবে।’

এভাবে ধাপে ধাপে এগোচ্ছেন হেমন্ত। পড়ালেখায় মন নেই। কষ্ট হলেও ছেলের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিলেন বাবা। একদিন ডেকে বললেন, ‘কিরে, রেকর্ড করবি?’ হেমন্তর আনন্দ আর ধরে না। এ কথা বাবা বলছেন! আনন্দ নিয়েই বাবার বন্ধু শান্তি বসুর সঙ্গে শৈলেশ দত্তগুপ্তর কাছে গেলেন। গান শুনতে চাইলেন শৈলেশ।
হেমন্ত গাইলেন, ‘যদিও দূরে থাকো, তবু যে ভুলি নাকো’। গান শুনতে শুনতে মাঝপথে শৈলেশ থামিয়ে দিলেন হেমন্তকে। হেমন্ত ভাবলেন, গান মনে হয় পছন্দ হয়নি। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে শৈলেশ ১০ দিনের মধ্যে গান রেকর্ডের কথা জানালেন। ১০ দিনের মাথায় ১৯৩৭ সালে বের হলো হেমন্তর প্রথম রেকর্ড।

আরও পড়ুন
বৃষ্টির গানে গানে হেমন্ত দিন
১৬ জুন ২০২২
জিতেছেন গানের ভুবন
রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত থেকে আধুনিক প্রতিটি ধারাতেই হেমন্তর কণ্ঠে সোনা ফলেছে। অনেক সিনেমাও সুপারহিট হয়েছে তাঁর গানের জাদুতে। ‘পথ হারাব বলেই এবার পথে নেমেছি’, ‘মুছে যাওয়া দিনগুলি’, ‘আজ দুজনার দুটি পথ’, ‘অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, ‘আমি দূর হতে তোমাকেই’ ইত্যাদি গানে যুগে থেকে যুগে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বুঁদ হয়ে আসছে। সংগীত পরিচালনা থেকে গানের সুর সংযোগ করার ক্ষেত্রেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন হেমন্ত।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com