1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

ভুক্তভোগীদের গণজমায়েত জুলাই হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

 

দর্শকসারির সামনের দিকে যাঁরা বসে ছিলেন, তাঁদের কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাত হারিয়েছেন, কেউ–বা হারিয়েছেন এক পা। কারও চোখে, মুখে, বুকে, পিঠে, কাঁধে গুলির ক্ষতচিহ্ন। দর্শকসারিতে আরও ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। গুমের শিকার স্বজনের ছবি হাতে এসেছিলেন অনেকে। হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বহু পরিবারের অসংখ্য মানুষের গণজমায়েত হয়ে গেল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমে ভুক্তভোগীদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণজমায়েত করেছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট এবং সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। এই আয়োজনে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও।

গণজমায়েত থেকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করা হয়। একই সঙ্গে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জোরালো দাবি ওঠে। অনুষ্ঠানে ‘জুলাই গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে মায়ের ডাকের নির্মিত তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে কথা বলে কিশোরী আদিবা ইসলাম হৃদি। তার বাবা পারভেজ হোসেন গুম হয়েছেন প্রায় এক যুগ আগে। হৃদি বলেছে, ‘বাবার আদর ছাড়া আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে গেছি। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন। আমরা আর কিছু চাই না। বাবাকে ফিরে চাই, বাবার হাতটা ধরতে চাই। আমার বাবাকে যারা গুম করেছে, তাদের বিচার চাই।’

গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের পাশাপাশি গণজমায়েতে কখনো কথা বলেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা; কখনো কথা বলেছেন অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। এর ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্য দিয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। কখনো কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। মঞ্চ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া শাহরিয়ার খান আনাসের শেষ চিঠি অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান তাঁর বাবা সাহরিয়া খান পলাশ। চিঠি পড়ার পর তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে কেউ বেইমানি করবেন না। তারা যে নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে, এই দেশটাকে আপনারা সুন্দরভাবে সাজান।’

গণ-অভ্যুত্থানের সময় চোখে গুলিবিদ্ধ হন কুষ্টিয়ার যুবক কোরবান শেখ। মঞ্চে উঠে তিনি বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিচার করতে হবে।
গুলি লেগে মুখের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে গেছে খোকন চন্দ্র বর্মণের। তিনি বলেন, ‘খুনি হাসিনার জন্য আমার এই অবস্থা। খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।’

গণজমায়েতে গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য মো. নূর খান বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি, একটা ভয়ার্ত চাদরের মধ্যে বাস করতে হয়েছে। গুমের ঘটনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ধারণার চেয়েও ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে সব উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে সবাইকে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে, এখন প্রশ্ন বিচারের। আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ আছে এবং জনগণ তাদের গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে।

অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর মানবাধিকারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, অনেক অন্ধকারের পর একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। প্রায়ই শোনা যায় মানবাধিকার ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এসেছে; কিন্তু মানবাধিকার আসলে সবার জন্য।

নেতারা যা বললেন
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। লিখিত বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে রেখে হাসিনার একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে দেশকে বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছিল।

তারেক রহমানের বক্তব্য পড়ে শোনানোর আগে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ বিচার ও শাস্তি দাবি করেন ইশরাক হোসেন।

অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তা পাঠান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনামুক্ত হওয়াটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দ ও স্বস্তির কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো শান্তি-স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে না। বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িতদের এখনো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বিষয়টিতে জোর দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ভিন্নমত পোষণ করায় গত ১৬ বছরে অনেককে গুম-খুন করা হয়েছিল। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার এমন কোনো জিনিস নয় যে আজকে সংস্কার করলে কালকে সব শুদ্ধ হয়ে যাবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘কোনো সংস্কারেই কিছু হবে না, যত দিন পর্যন্ত আমরা নিজেদের সংস্কার না করব।’

শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট ও স্যাডিস্ট’ বলে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, গুম-খুনের বিচার না হলে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যাবে। জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে বিদায় দিতে হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল বলে অভিযোগ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নতুন বাংলাদেশে গুম-খুন, আয়নাঘর, অত্যাচার, শোষণ-বৈষম্য থাকতে পারবে না। একটা জাতীয় ঐক্য হয়েছে, অনৈক্যের মধ্যেও এই ঐক্য হয়েছে। যেহেতু সামনে নির্বাচন, রাজনীতির লড়াই চলবে। কিন্তু এই লড়াইয়ের মধ্যেও যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়, সে রকম পরিস্থিতি থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের বিচার কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিষয় নয়, তারা ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শাসক পালিয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদ এখন পর্যন্ত তার ব্যবস্থা নিয়ে হাজির আছে। এই ফ্যাসিস্ট শাসনের বাস্তবায়নকারী ও নির্দেশদাতা প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা, ধ্যানধারণা, ভাবাদর্শ ও রাজনীতির বিপরীতে গণতান্ত্রিক জায়গায় দাঁড়াতে হবে। একটা দলের ফ্যাসিবাদ অপসারিত হয়ে আর কোনো ফ্যাসিবাদ যাতে কায়েম না হয়।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com