দিদারুল আলম
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজে (অপরাধমূলক কাজ) জড়িত।
ফারমার্স ব্যাংকের ১৫৯ কোটি টাকা পাচারের মামলায় মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর জামিন শুনানিতে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালত এ মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে আগামী ১ জুন দুদকের লিভ টু আপিলের উপর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছে আপিল বিভাগ।
ফারমার্স ব্যাংকের ১৫৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল মাহবুবুল হক চিশতী ও তার পরিবার এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের নামে মামলা করে দুদক। এই মামলায় ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীসহ (বাবুল চিশতী), তার স্ত্রী রোজি চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ফারমার্স ব্যাংকের চাকরিচ্যুত এসভিপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও চাকরিচ্যুত ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ইতিমধ্যে এই মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ রাষ্ট্রপক্ষে ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করেছে। এই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন পান রাশেদুল। সেই জামিন বহাল রাখে হাইকোর্ট। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে দুদক। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়।লমআপিলের শুনানিতে রাশেদুলের আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ বলেন, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ৫৫ লাখ টাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঐ টাকা তার হিসাব থেকে আরেকটি হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে। এছাড়া আর কোনো অভিযোগ নাই।
এ পর্যায়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. ইমান আলী বলেন, মামলার নথি থেকে দেখা যাচ্ছে মাহবুবুল হক চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যরা অপরাধমূলক কাজে জড়িত। কিন্তু আপনি সেটা না বলে মামলার একটি খণ্ডিত অংশ তুলে ধরছেন কেন?
রাশেদুলের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক বলেন, মামলার এজাহারে যে পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এসেছে সেখান থেকে কোনো টাকা ব্যাংকে ফেরত দিয়েছেন কি? এটা তো জনগণের টাকা। জনগণের টাকা এভাবে তছরুপ হয়ে যাবে? নিশ্চুপ থাকেন আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ। তখন দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, একটি টাকাও ব্যাংকে ফেরত দেওয়া হয়নি।
হাসান আরিফ বলেন, আমার মক্কেলের অ্যাকাউন্টে পাঁচ বছর ধরে এই টাকা এসেছে। অসুদুপায়ে অর্জিত হলে হঠাৎ করেই তা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক বলেন, ডেসটিনির অর্থ পাচারের মামলায় আমরা (আপিল বিভাগ) অর্থ ফেরত সাপেক্ষে আসামিদের জামিনের কথা বলেছি। এই মামলায় আমার ব্যক্তিগত মত হলো পাচারকৃত অর্থ ব্যাংকে ফেরতের উপর আসামির জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করব। পরে হাসান আরিফ শুনানির জন্য সময় চাইলে ১ জুন পর্যন্ত মুলতুবি করে আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকিং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাহবুবুল হক চিশতী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্ত্রী, সন্তান ও নিজের নামে এবং নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ২৫টি হিসাব খোলেন। পরে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের সহায়তায় গ্রাহকদের হিসাব থেকে পাঠানো ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা ওই ২৫টি হিসাবে স্থানান্তর করেন। এসব টাকা নিজেদের হিসাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও লেয়ারিংয়ের পাশাপাশি নিজেদের নামে কেনা শেয়ারের দাম পরিশোধ করেন। লেনদেনের একটি বড় অংশই হয়েছে গুলশান শাখা থেকে। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের চলতি হিসাবে গুলশান শাখায় প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা জমা হয়। এর পুরোটাই নগদে তুলে নেওয়া হয়। বাকি ২১ কোটি টাকা বিভিন্ন হিসাব থেকে লেনদেন হয়। মামলার আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।