সাইফুল ইসলামআওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক প্রার্থী। প্রার্থীরা আসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে, ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়ে জানান দিচ্ছেন, তারা ওই আসনের প্রার্থী হতে চান।
অনেকে আবার আসলামুল হকের নামমাত্র ছবির সঙ্গে নিজের ছবি বড় করে দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছেন মনোনয়ন পাওয়ার প্রচারণায় নেমেছেন। প্রচার-প্রচারণার এমন ডামাডোলে কে হবে আসলামুল হকের যোগ্য উত্তরসূরি-এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চলছে আলোচনা। এত কিছুর পেছনে কর্মীরা একটা উদ্দেশ্য দেখছেন-নাম ফুটাতেই এত তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ঢাকার ১৪ আসনে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও আসলামুল হকের মতো জনপ্রিয় দক্ষ প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ।প্রার্থী।এদিকে অনেক ‘সুবিধাবাদী’ আশাবাদী-তারাও মনোনয়ন পেয়ে যাবেন। তাদের আচার আচরণে তা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে ঢাকা মহানগর নেতাদের দাবি, এই দলে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। ‘ভাড়া করা নেতাদের’ মনোনয়ন দিতে হবে না।
অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দলীয় প্রতীক চাওয়াটা কীভাবে দেখছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মহানগরের একাধিক নেতা বলেন, দলকে ব্যবহার করে কিছু সুবিধাবাদী লোক আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে বিশাল ইমেজ অর্থাৎ পৃথিবীব্যাপী যে সুনাম, তাকে ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর হাইব্রিড বা সুবিধাবাদীদের দল থেকে বের করে পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে দল গুছিয়েছি। ঢাকা-১৪ আসনে যে উপনির্বাচন হচ্ছে সেখানে আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের রাজনীতি করে না, ভিন্ন মতাদর্শের লোক, সুবিধাবাদী লোক, তারা মনে করছে যে অবৈধ অর্থ উপার্জনের টাকায় তারা পোস্টার লাগিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করতে পারবে।
ঢাকা-১৪ আসনে নৌকা প্রতীক পেতে চান একাধিক ব্যবসায়ী নেতাও। তারা সকলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। তাদের অনেকে নামমাত্র ত্রাণ বিতরণও করেছেন। তবে প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এই আসন (ঢাকা-১৪) থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছি। যেহেতু আমার স্বামী এই আসনের এমপি ছিলেন। তাই তার অসম্পূর্ণ কাজগুলো যাতে ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য আমি প্রার্থী হয়েছি। উপরে আল্লাহ আর নিচে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, আমি তার (আসলাম হক) অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করার যোগ্যতা রাখি।’
উপনির্বাচনে এত প্রার্থী হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, এ নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রয়েছে, গাবতলী পশুরহাট, বাস টার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, বালু ও পাথরঘাট, বড় বড় শপিংমল, ফুটপাত, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর চিড়িয়াখানার ইজারা, খেয়াঘাট, মাজার, মাছের আড়তসহ বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি। তাই অনেকের দৃষ্টি এ আসনটিতে। দলীয় মনোনয়ন পেলেই নিশ্চিত বিজয় এই ধারণাও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে। এমপি হলেই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হওয়া সহজ। তাই এত প্রার্থীর ছড়াছড়ি বলে অনেকের সঙ্গে আলাপে মিলেছে এমন তথ্য।
ঢাকা-১৪ আসনে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মাজহারুল আনাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হানিফ, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরিন রোকসানা, ফুওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিআইপি ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ভাই এখলাসউদ্দিন মোল্লা, ব্যবসায়ী মো. লুৎফর রহমান। অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলও দলীয় মনোনয়ন নৌকা পেতে চান।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি মানবকণ্ঠকে বলেন, আমার রাজনীতি শুরু এই আসনেই। দীর্ঘদিন ওই এলাকায় রাজনীতি করেছি। ওই এলাকা যারা আছেন আমারই সহযোদ্ধা। আসলাম আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের কাজটাই মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের সেবা করা। জনগণের পাশে গিয়ে মানুষের উন্নয়ন করার সুযোগটা বিশাল ব্যাপার। আমি বলব, যেহেতু রাজনীতি করি, এত বিশাল একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যদি আওয়ামী লীগ আমাকে দেয় বা মনোনীত করেন, তাহলে মানুষের সেবা করার জন্য আমি আমি প্রস্তুত আছি।
সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘আমার জন্মই এই আসনে। এখানে আমার ক্ষেত্রে কোনো ইজমই কাজ করে না। এখানে ৬৪ জেলার মানুষ বসবাস করেন। তারা স্থানীয়দের বাইরে যায় না। এলাকার লোকজন আমাকে চায়। অনেকে মহিলা বলে প্রশ্ন তুলতে পারে। কিন্তু আমি মানুষ হিসেবে রাজপথে ছিলাম। দলের জন্য সব জায়গাই সাহসী ভ‚মিকা রেখেছি। আমি অনেক পরিশ্রম করে মানুষের মন জয় করেছি। আপার কাছে ম্যাসেজ আছে, আমি বিশ্বাস করি, আপা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল মানবকণ্ঠকে বলেন, আমি এই এলাকা ছোটবেলা থেকে থাকি। আমি রাজনীতি করি মানুষের সেবা করার জন্য। আমাদের নেত্রী যদি সুযোগ আমাকে দেন, আমিও প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। মাননীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সবাই আস্থাশীল। তাই সবাই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে আমার মতামত হলো, যারা দীর্ঘদিন রাজনীতিতে পরীক্ষিত, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সত্যিকার অর্থে বুকে ধারণ করেন। এই ধরনের নেতৃত্বকে যদি ঢাকা-১৪ আসনে নির্বাচিত করা হয় তাহলে মানুষ ভালো থাকবে, দল ভালো থাকবে।
ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচন