নাটোরের কয়েকজন বাগানমালিক জানান, সেখানকার বিখ্যাত হিমসাগর আম বাগান থেকে পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। বাছাই করা এই আমের আলাদা কদর রয়েছে রাজধানীতে।
মোছাব্বের হোসেন (নাটোর থেকে ফিরে)
নাটোরের বিভিন্ন বাগানে কাঁচা–পাকা আমের দেখা মেলে।
নাটোরের বিভিন্ন বাগানে কাঁচা–পাকা আমের দেখা মেলে।ছবি: মোছাব্বের হোসেন
আমের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে মাসখানেক হলো। পাখির ছবি তোলা আর বাগানের পাকা আম পেড়ে খাওয়ার জন্য গন্তব্য নাটোরের লালপুর।
গিয়ে দেখা গেল, চারদিকে আমের গাছ। হাত বাড়ালেই আম। গাছে কাঁচা আমের পাশাপাশি দু-একটা পাকা আমও উঁকি দিচ্ছে। তবে প্রথম কাজ পাখির ছবি তোলা।
লালপুরের সালামপুরের একটি সাঁকোতে পাখির ঝাঁক বসেছে। ছবি তোলার সময় দেখা যাচ্ছিল, আম বিক্রেতারা বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে শহরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। ভ্যান বা সাইকেলে করে তাঁরা আম পরিবহন করছেন। একটি সাইকেলে ভর্তি করে আম নিয়ে যাচ্ছিলেন মোড়দহ গ্রামের মিন্টু আলী। আমের ভারে তিনি একা সাইকেল সাঁকোর ওপরে তুলতে পারছিলেন না। পথচারী একজন তাঁকে সাহায্য করলেন।
সেখানেই কথা হয় মিন্টু আলীর সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, তিনি এক মণ লকনা আম কিনেছেন ৫০০ টাকায়। এই আমের আসল নাম লক্ষ্মণভোগ। সব আমই গাছ পাকা। প্রতি কেজি আমের দাম পড়েছে সাড়ে ১২ টাকা। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় সারা দেশেই এই আমের চাহিদা রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
মিন্টু আম কিনেছেন পাইকারের কাছ থেকে। বাগানগুলো পাইকারেরা আম ধরার পরই মালিকদের কাছ থেকে কিনে নেন। তারপর তাঁরা বিক্রেতার কাছে মণ দরে আম বিক্রি করেন। সেই হিসাবে আমের প্রকৃত দাম আরও কম।
নাটোরের একটি আমবাগান।
নাটোরের একটি আমবাগান।ছবি: মোছাব্বের হোসেন
ঢাকায় ফিরে মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লক্ষ্মণভোগ আম প্রতি কেজি ৬০ টাকার আশপাশের দামে বিক্রি হয়। কারওয়ান বাজারের খুচরা আম বিক্রেতা মমিন মিয়া জানালেন, ঢাকার আড়তে এসব আম নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসে। সেখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কেনেন। পরে তা বিক্রি করেন।
লক্ষ্মণভোগের পাশাপাশি এখন নাটোর থেকে হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম বাজারে আসছে। এ জন্য সারা দিন শ্রমিকেরা বাগান থেকে পরিপক্ব আম পাড়ছেন, আর বিক্রেতারা সেগুলো সংগ্রহ করে শহরে আনছেন।
নাটোরের লালপুরে আমের বাগানের মালিক বাঘা শাহদৌলা সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. শাহ্জাহান আলী সরকার বললেন, বাগানে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাগান ধরে ব্যাপারীরা কিনে নেন। বিভিন্ন পর্যায়ে আম হাতবদল হয়। রাজধানীতে গিয়ে দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
নাটোরের বিভিন্ন বাগানে কাঁচা–পাকা আমের দেখা মেলে।
নাটোরের বিভিন্ন বাগানে কাঁচা–পাকা আমের দেখা মেলে।ছবি: মোছাব্বের হোসেন
নাটোরের কয়েকজন বাগানমালিক জানান, সেখানকার বিখ্যাত হিমসাগর আম বাগান থেকে পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কেনেন। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। বাছাই করা এই আমের আলাদা কদর রয়েছে রাজধানীতে। সেখান থেকে পাঠানো আম বাজারভেদে ঢাকায় ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রায় তিন গুণ দামে কিনতে হয় সাধারণ মানুষকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে দেশে বছরে ১২ লাখ টনের মতো আম উৎপাদিত হয়। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে আম–বাণিজ্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, বছরে আমের বাণিজ্য হয় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
খুচরা বাজারে এ বছর আমের দাম তুলনামূলক কম। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আম মান ও জাতভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম কমে পাওয়ার জন্য অনেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সরাসরি আম আনাচ্ছেন। তাঁদের একজন মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত সোমবার ৪০ কেজি আম আনিয়েছেন। মোড়কের খরচসহ প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৫২ টাকা, আর কুরিয়ারে প্রতি কেজির ভাড়া ১৫ টাকা। তিনি বলেন, সমস্যা হলো কুরিয়ারে আম আনতে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, আম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার আম কিনে কুরিয়ারে পাঠানোর মতো পরিচিত লোকও থাকতে হয়।