নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা সংক্রমণ কমাতে দেশব্যাপী দ্বিতীয় দফার আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন আজ রোববার (২৫ জুলাই)। গত দুই দিনের তুলনায় আজ রাজধানীর সড়কে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে সড়কে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশী ছিল আগের মতোই। পুলিশ বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে অহেতুক যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সড়কে কেউ বের হলেই পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। বিনা প্রয়োজনে কেউ বের হলে কোন ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গ করায় গ্রেফতার ও জরিমানাও করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, কঠোরতম লকডাউনের তৃতীয় দিন ঢাকার সড়কে মানুষের সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যাংকসহ জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এদিন বের হয়েছেন।
রোববার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব সড়কেই প্রাইভেট কার চলছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ভাড়া করা বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি চলতে দেখা গেছে। সড়কে থাকা বেশির ভাগ গাড়িই জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে কেউ বিনা প্রয়োজনে বের হয়েছেন কি না, ব্যারিকেড বসিয়ে যাচাই করে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
গাবতলী ব্রিজের পাশে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক মো. দুলাল হোসেন রোববার সকালে বলেন, রাস্তায় মানুষ বেড়েছে, সড়কে গাড়িও বেড়েছে। ব্যাংকের লোকজনই বেশি ঢাকায় আসছেন। আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ মাস্ক না পরে গাবতলী ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যাঁরা ঢাকা আসছিলেন, পুলিশ তাদের সবাইকে একটি করে মাস্ক দিচ্ছে।
গাবতলী দিয়ে যারা ঢাকা ছাড়ছেন চেকপোস্ট বসিয়ে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এই চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শামসুদ্দিন সরদার বলেন, রোববার সকাল থেকে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে বেশি, বের হওয়ার সংখ্যা কম। অন্যদিনের থেকে সড়কে বেশি গাড়ি রয়েছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় এই চেকপোস্টে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত চারটি গাড়িকে জরিমানা, দুটি গাড়ি ডাম্পিং এবং দুজনকে আটক করা হয়েছে।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, বিজয় সরণি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে, বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রোববার সকাল থেকে প্রতিটি চেকপোস্টেই যানবাহনের ভিড় দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনের চেকপোস্টে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে যানবাহনের জটে আটকা পড়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন মাহমুদ। তিনি বলেন, মতিঝিল যাব কিন্তু এখানে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আটকে আছি। চেকপোস্ট পার হতে আরও ১৫ মিনিট লাগবে বলে মনে হচ্ছে।
রোববার সকালে শাহবাগ ঘুরে দেখা যায়, ঘর থেকে বের হওয়া মানুষেরা জরুরি প্রয়োজন ও নানা ধরনের অজুহাত দেখাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও অফিসে যেতে দেখা গেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হলে তাকে শাস্তির আওতায় নেওয়া হবে। বিধিনিষেধ চলাকালে জনগণকে সতর্ক থাকা, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।
সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, বাসাবো, মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের মোড়ে মোড়ে বাশঁ দিয়ে ব্যারিকেট দিয়ে পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
গত ১৩ জুলাই বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আদেশে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল ঈদের কারণে। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় এই ঘোষণায়। আগামী ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ৩৮৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম বাসসকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক ঘোরাফেরা করায় রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৩৭ জনকে ৯৫ হাজার ২৩০ টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ৪৪১টি গাড়ির ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।