শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের ৫ম দিনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ব্যাপকহারে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হচ্ছে।
এসব যাত্রী ও যানবাহন পারাপার ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। অনেকটা ‘প্রয়োজন আইন মানে না’ প্রবাদের মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ রুটে।
সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা নানা উপায়ে ঢাকামুখী বহু মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ি নদী পার হওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে আসছে। অপরদিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে আসছে শত শত সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন।
আবার পাটুরিয়া হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রীরা। উভয়মুখী যাত্রীর চাপে প্রতিটি ফেরি ও ঘাট এলাকায় উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।
দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৫নং ফেরিঘাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারদের একটি বিরাট দল ফেরিতে যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তাদের শত বাধার মধ্য দিয়েও ঘাটে আসা কয়েকশ যাত্রী, বেশকিছু মোটরসাইকেলচালক ও ব্যক্তিগত গাড়ি হুড়মুড় করে ঘাটে ভেরা ফেরি ভাষাশহীদ বরকতে উঠে পড়ে।
এ সময় তাদের ফেরি থেকে নেমে যেতে বারবার অনুরোধ করলেও অধিকাংশ যাত্রী নামছিলেন না। এতে ম্যাজিস্ট্রেট ফেরি ছাড়তে চালককে নিষেধ করেন। পরে তিনি সেনা সদস্য, পুলিশ ও আনসারদের সহায়তা নিয়ে বেশিরভাগ যাত্রী ও মোটরসাইকেলচালকদের এক প্রকার জোর করে ফেরি থেকে নামিয়ে দেন। তবে যৌক্তিক কারণ দেখানো কিছু যাত্রীকে ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেন।
এদিকে ৫নং ঘাট দিয়ে পার হতে না পারা যাত্রীরা চলে যান ৬নং ঘাটে। সেখানে অপেক্ষমাণ একটি ফেরিতে সকল যাত্রী উঠে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনা সদস্যরা ওই ঘাটে গেলেও ততক্ষণে শাপলা-শালুক নামের ফেরিটি ঘাট ছেড়ে যায়। এভাবেই নানা দুর্ভোগ ও বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে দিনভর চলতে থাকে এ রুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার।
এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বলেন, দিনের চেয়ে রাতে এ রুট দিয়ে বেশি যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি পার হচ্ছে। লকডাউনে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। যে কারণে শত বাধা সত্ত্বেও মানুষ কর্মের উদ্দেশ্যে ছুটে যাচ্ছেন।
আলাপকালে কুষ্টিয়া থেকে আসা ঢাকার একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে অনতিবিলম্বে চাকরিতে যোগ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ঘাটে এসে ফেরিতে উঠতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হই।
ঝিনাইদহ থেকে আসা শাকিল হোসেন নামের এক প্রবাসী জানান, আমার ছুটির মেয়াদ হয়ে আসছে। ঢাকায় গিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য নানা ভোগান্তি সয়ে ঘাট পর্যন্ত এসেছি। যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকায় পৌঁছতেই হবে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘাটে আসা প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো জরুরি কাজের জন্য এসেছেন। তবে আমরা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে ফেরিতে উঠতে দিচ্ছি না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অ্যাম্বুলেন্স, কাঁচামালসহ জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য বর্তমানে ৮টি ফেরি চালু রাখা হয়েছে। ঘাটে কোনো অপেক্ষমাণ গাড়ি নেই। তবে বিভিন্ন উপায়ে যেসব যাত্রী ঘাটে আসছেন তারা বাধাপ্রাপ্ত হলেও সুযোগ বুঝে ফেরিতে পার হয়ে যাচ্ছেন। মহাসড়কে আটকাতে না পারলেও দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের ফেরিঘাটে আটকানো খুব কঠিন।