পরিবহনে ব্যবহৃত সিএনজি ছাড়া সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বিভিন্ন খাতের গ্যাসের দামবৃদ্ধির হিসাব করলে গড়ে বৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশের মতো। আবাসিকে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ডাবল বার্নারে দাম ৯৭৫ থেকে হয়েছে ১০৮০ টাকা, বেড়েছে ১০৫ টাকা। এক বার্নারের সিঙ্গেল চুলা ৯২৫ থেকে ৬৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৯০ টাকা। প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের প্রতি ইউনিটে (ঘনমিটার) গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়েছে। নতুন দাম চলতি জুন মাসেই কার্যকর হয়েছে। যা জুলাইয়ে পরিশোধ করবেন গ্রাহকরা।
দামবৃদ্ধির বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গতকাল রবিবার বিকালে ভার্চুয়ালি গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সংস্থাটির চেয়াম্যান আব্দুল জলিল দেশের বাইরে থাকায় দাম ঘোষণা করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। এ সময় আরও ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহি, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামান।
সরকারি হিসাবে ৪০ লাখের মতো আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, আবাসিকে বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ গ্রাহক অনেক বেশি। তাদের গ্যাস চুরির দায় বৈধ গ্রাহকদের বহন করতে হচ্ছে। ফলে বছর ঘুরলেই দাম বাড়াচ্ছে সরকার।
গ্যাসের দাম বাড়ালেই গণপরিবহনে নৈরাজ্য শুরু হয়। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করেন। সেটা যাতে না করতে পারে সেই লক্ষ্যে এবার সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। ২০১৯ সালে নির্ধারিত প্রতি ঘনমিটারের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে, দামবৃদ্ধি ২৫৯ শতাংশ।
নতুন দাম অনুযায়ী সিএনজির দাম আগের মতো ৩৫ টাকাই থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ২ পয়সা করা হয়েছে। তবে শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ- ক্যাপটিভ গ্যাসের দাম ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। শিল্পের ক্ষেত্রে আগে গড় দাম ছিল ১০ টাকা ৭০ পয়সা। এখন সেটা শ্রেণিবিন্যাস করে হয়েছে বৃহৎ শিল্পে প্রতি ঘনমিটার ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে গ্যাসের দাম কমেছে। আগে ছিল ১৭ টাকা ০৪ পয়সা। এখন করা হয়েছে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা। বাণিজ্যিক খাতে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ২৩ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা।
গ্যাসের দাম ঘোষণাকালে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিও হুমকির মুখে। কিন্তু সরকারের সঠিক উদ্যোগের কারণে এখনো অর্থনীতি ভারসাম্য হারায়নি। রপ্তানি শিল্প ও জনজীবনে যাতে প্রভাব না পড়ে, এসব বিবেচনায় নিয়েই গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়েছে।
কমিশনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পেট্রোবাংলার সঙ্গে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি জানুয়ারির প্রথম দিকে গড়ে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে। এরপর ২১ থেকে ২৪ মার্চ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সবার কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়া হয়। দাম বাড়ানোর পরও ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এর মধ্যে সরকার ভর্তুকি দেবে ৬ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর গ্যাস খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে সমন্বয় করা হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ক্যাবের সহ-সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বরাবরের মতো গণশুনানি প্রহসনে পরিণত হলো। কোনো যুক্তি-তথ্যই কমিশন আমলে নেয়নি। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটাই কমিশন বাস্তবায়ন করেছে।