1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
  3. jeradmin@deshmediabd.com : :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
ব্রাজিলে বাস দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ডলারের বাজার আবার অস্থির Govt grants 10-year tax holiday for renewable energy firms Mobile surveillance used in pinpointing victims’ location: Commission গ্যাস সংকটে উৎপাদন নেমে অর্ধেকে, কয়েক শ কারখানা বন্ধ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসির পরিকল্পনায় ডিসেম্বর ২০২৫ ভোটার তালিকায় ত্রুটি নেই দাবি ইসির সরকারের এক পক্ষ ২০২৬-এর এপ্রিলে, বিএনপিসহ সমমনারা চায় ২০২৫-এর জুনের মধ্যে ভোট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আসছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি

দারিদ্র্য হ্রাস ও আয় বাড়াতে ক্ষুদ্র ঋণ

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৬৯ বার দেখা হয়েছে

ড. মো. শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। আমাদের দেশের জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। যদিও আমরা শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এভাবে দেশের মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অপরিহার্য খাত। আর এ কৃষি খাত উন্নয়নে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ক্ষুদ্র ঋণ। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হলো গ্রামীণ এবং কৃষি অর্থায়ন, যা আর্থিক ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থায়ন বলতে তহবিল সংগ্রহ এবং পুলিংয়ের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগণ, বিশেষ করে কৃষককে গ্রামীণ এলাকায় অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের আর্থসামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য নগদ অর্থ দেয়াকে বোঝায়। গ্রামীণ ফাইন্যান্সের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অনানুষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ দরিদ্রদের একাধিক আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ছোট ও মাঝারি গ্রামীণ সংস্থা এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলো আরো উল্লেখযোগ্য আর্থিক পরিষেবা দেয়। ক্ষুদ্র ঋণ সাধারণত গ্রামীণ বা অনুন্নত এলাকার দরিদ্র বা কৃষকের কাছে কোনো জামানত ছাড়াই ছোট ঋণের আকারে ঋণ প্রসারিত করার একটি মাধ্যম।

গ্রামীণ ও কৃষি অর্থ এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে সর্বজনীন স্বীকৃত। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বিশ্বের দরিদ্রদের চাহিদা পূরণ না করে অর্জন করা সম্ভব না। দরিদ্র্য মানুষ যাদের অধিকাংশই এখনো গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে। গ্রামীণ এলাকায় অর্থ ব্যবহার করে বিনিয়োগ, খরচ, ঝুঁকিব্যবস্থাপনা এবং ধাক্কা মোকাবেলা সবই উন্নত করা সম্ভব।

ব্র্যাক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ক্ষুদ্র ঋণ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের এক গবেষণায় ক্ষুদ্র ঋণ এবং দারিদ্র্য হ্রাসের মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। এ গবেষণার মূল বিষয় হলো ক্ষুদ্র ঋণ এমন অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে, যা একটি জনবহুল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। যখন একটি পরিবার তাদের ফেরত দেয়ার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি ধার নেয়, তখন এটি তাদের দারিদ্র্য থেকে বাঁচার ক্ষমতার ওপর আরো বেশি প্রভাব ফেলে।

ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি) অনুসারে গ্রামীণ উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে মনোনিবেশ করলেই বৈশ্বিক দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে। দারিদ্র্য দূর করতে দরিদ্রদের ঋণদানের সম্ভাব্যতা প্রদর্শন করতে হবে, যা নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ঋণ দেয়ার খরচ এবং ঝুঁকি কমায়। বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি এখন বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের বেশকিছু মডেল বিশ্বব্যাপী চালু হয়েছে। যদিও প্রোগ্রামগুলো ঋণগ্রহীতাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে। বৈজ্ঞানিকভাবে এ ধরনের সুবিধাগুলো মূল্যায়নের জন্য সামান্য চেষ্টা করা হয়েছে। যেসব পরিবারে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ঋণ নেয়ার বিকল্প রয়েছে, তাদের খাবার, কেনাকাটা করার বা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সম্ভাবনা কম।

বিশ্লেষকরা ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকার করে যে ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র লোকদের দারিদ্র্য হ্রাস করতে এবং বিভিন্ন উপায়ে তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি, আর্থিক স্থিতিশীলতা বা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিবেচনা করা গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষমতায়নের ফলাফল হিসেবে সর্বক্ষেত্রে বিবেচনা করা যায় না।

ক্ষুদ্র ঋণ এখন সাধারণভাবে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে উন্নয়ন উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। ক্রমবর্ধমান মনোযোগ এবং সংস্থাগুলোর কারণে ক্ষুদ্র ঋণের গতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। যা হোক, সব ভৌগলিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণের পরিষেবাগুলো মানুষের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়ে সরকারকে আরো সতর্ক থাকার পাশাপাশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সম্প্রতি সরকারের উদ্যোগে দেশের ক্ষুদ্র ঋণ খাতকে শক্তিশালী করতে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। যা খুবই ভালো উদ্যোগ এবং প্রশংসনীয়। এ ঋণের অর্থ দিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে। এছাড়া যারা উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় থাকে, তাদের উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজে আসবে।

এ ক্ষুদ্র উদ্যোগের ফলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীণ দারিদ্র্য দূর হবে। শহর-গ্রামের বৈষম্য কমাতে এ প্রকল্প কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। করোনা-পরবর্তী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন জরুরি। পিকেএসএফের মতো ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানকে এ রকম প্রকল্পের আওতায় বেশি অর্থায়ন করতে পারলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংকনির্ভরতা কমবে, যা দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে আসবে। গত এক দশকে গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্রের হার কমছে। কিন্তু আরো কমানো দরকার। তবে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সীমিত। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেড়ে ওঠা ও তাদের কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির একটি পথ হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ। তাই ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সরকারকে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে দরিদ্র লোকের সংখ্যা কমে আসবে।

এক সংবাদে দেখতে পেলাম, ২০১৮ সালে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের আওতায় ‘আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন’ প্রোগ্রামের সন্ধান পান শাহীনুর। সেখান থেকে ব্র্যাকের এক কর্মীর পরামর্শে তিনি ১৮ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ ক্ষুদ্র ঋণ তার জীবনকে ব্যাপক পরিবর্তন করে ফেলেছে। তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। তিনি এ ঋণ নিয়ে সবজির দোকান দেন। পরে তার ব্যবসার আরো প্রসার হয়। এখন তিনি আশুলিয়ায় জমি কিনেছেন। সন্তানকে মাসে ৮ হাজার টাকা বেতনের স্কুলে পড়াশোনা করান।

দেখুন ক্ষুদ্র ঋণ মানুষের জীবনে কীভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটি ঋণ আর মানুষের পরিশ্রম তাদের জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে। যার উদাহরণ শাহীনুর। আমরা এখন বিশ্বাস করি মানুষ পথ খুঁজলে, কোনো না কোনো উপায়ে দুরাবস্থা থেকে মুক্তি মেলে। তাই মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ নিতে উৎসাহ জোগাতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমি মনে করি, সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের খবর মানুষকে অবগত করতে পারে, যা মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র ঋণের উন্নয়ন বছরের পর বছর যথেষ্ট অগ্রগতি এনেছে, কিন্তু বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এখনো আর্থিক পরিষেবার সুবিধা পায়নি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য দূর করার জন্য ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ পরিষেবা একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটি নির্ধারণ করা হয়েছিল যে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদত্ত ক্ষুদ্র-অর্থায়ন পরিষেবার প্রভাব ইতিবাচক ছিল।

এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সম্পত্তি উপশম সূচকে মাইক্রো ফাইন্যান্স সার্ভিসের একটি পরিসংখ্যানগত ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং এটি ঋণগ্রহীতার আয়ের মাত্রা বাড়িয়েছে। পরিশেষে যা শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এর প্রভাব যুক্তিসংগতভাবে বেশি। গবেষণাটি ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির কয়েকটি ত্রুটিও উপস্থাপন করে, যেমন উচ্চ সুদের হার এবং সাপ্তাহিক পরিশোধ। এছাড়াও আরেকটি গবেষণায় চিহ্নিত হয়েছে যে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার হলে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির প্রভাব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হতে পারে। এসব বিষয়ে সরকারকে তদারকি বাড়াতে হবে। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ভালো প্রশিক্ষিত কর্মীরা একটি অসামান্য অবদান রাখতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণ একটি ভালো উদ্যোগ, যা এ বছর চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় একজন গ্রাহক সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতে পারবে। এ বিষয়টি ভালোভাবে কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং গ্রামীণ এলাকার মানুষকে এ বিষয়ে জানাতে হবে। যাতে এ প্রকল্পের সামগ্রিক উন্নয়ন হয় এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

 

ড. মো. শফিকুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com