বিশেষ প্রতিনিধি
কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়েছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তদন্তেই উঠে এসেছে ভয়াবহ সব অনিয়মের চিত্র। ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার ট্যাক্স-ভ্যাটও। এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ৬ বছরে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৯৬৪ টাকা সম্মানী নিয়েছেন। আবার এ সম্মানীর বিপরীতে ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৪ টাকা উৎসে কর কর্তনযোগ্য হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তা না কেটে রেখে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, গভর্নিং বডির সভাপতি, সদস্য সচিব ও সদস্যদের পদগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তা পেতে রয়েছে প্রতিযোগিতা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এ সম্মানীর নেওয়ার স্বপক্ষে কোনো বিধান নেই। তাই মনিপুর স্কুলের গভর্নিং বডির সম্মানী বাবদ গৃহীত সব অর্থ প্রতিষ্ঠানের তহবিলে ফেরতযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
তদন্তে ধরা পড়েছে, প্রতিষ্ঠানের ম্যাগাজিন খাতে ৩ কোটি ১ লাখ টাকা আয় করেও এ খাতে ১ টাকাও ব্যয় করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের থেকে এই অর্থ আদায়কে নীতিবিবর্জিত বলেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া ঠিকাদারি কাজের নামে কোনো কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে তদন্তে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এ চিত্র উঠে এসেছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়। ডিআইএ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিষয়ে খরচের টাকা ফেরত নেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিধিবিধান ভবিষ্যতে যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সরকারের কাছে মোট ১১ দফা সুপারিশ পেশ করেছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান বলেন, নানাভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রতিবেদন বিশ্নেষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, শিক্ষকদের বিশেষ ক্লাসের সম্মানী থেকে উৎসে কর না কেটে ২ কোটি ৯ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল থেকে ভ্যাট না কেটে সরকারের ২২ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল থেকে আয়কর কর্তন না করে সরকারের ১০ কোটি ৫২ লাখ ২৬ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ২০২০ সালের ২ জুলাই অবসর নেন। তবে কলেজ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে তিনি ২০২০ সালের ৩ জুলাই থেকে অধ্যক্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই মূল ক্যাম্পাসের অতিরিক্ত আরও ৫টি ক্যাম্পাস চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ৬টি ক্যাম্পাসে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ইংরেজি ভার্সন এবং ইংরেজি মিডিয়ামের একাধিক শিফট ও শাখা চালু। বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজারের বেশি। তদন্তকালে প্রতিটি ক্যাম্পাসের আশপাশের ভবন ও গৃহে বিপুলসংখ্যক কোচিং সেন্টার দেখা গেছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক এবং এর বাইরে শিক্ষাদান কার্যক্রম বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে।